Posts

Showing posts from July, 2021

ছোঁয়া

  একমুঠো শাপলা ফুলের শ্রাবণ স্বপ্ন বিছিয়ে, আমি আজও তোমার পথ দেখি। মেঘমেদুর আকাশে আমার গাঙচিল দু'চোখ হারিয়ে যায় অসীম শূন্যতায়। আলতা পায়ের সেই ধূসর সামিয়ানা যত্নে তুলে রেখেছি ন্যাপথলিন ভরে; অন্তর্লীন ক্যানভাসে কেঁপে ওঠে তোমার ঠোঁট, আমার জমাট নীল হৃদয়ের টুপটাপ রক্তক্ষরণ। তোমার গোলাপি আঁচলে বেহাগ সুরের মূর্ছনা, মনের চিলেকোঠায় আলগোছে বাজে গুনগুন। বিশল্যকরণী দিনগুলোর ছোঁয়ায় আমি জেগে উঠি প্রতিবার, কুয়াশার মতো কেটে যায় সব বিষ। শব্দ মিছিলের ব্যাপক জোয়ারে দিশেহারা আমার কলম, নিঠুর শ্রাবণ ঢেউয়ে ভেসে গেছে যত শাপলা, খন্ড মেঘের দৌরাত্ম্যে ঘোলাটে জলছবি, তোমায় নিয়ে কত কবিতা ভ্রূণ হয়েই হারিয়ে গেছে... তোমাকে আমি ছুঁতে পারি না।

জিজীবিষা

  #জিজীবিষা অবাধ সন্তরণে পাশ কাটিয়ে গেছি সব প্লেকার্ড ধরা মিছিল। সাতে-পাঁচে না থাকা মজ্জার গভীরে প্রোথিত, আমার রে-ব্যান কখনো প্রখর খরতাপ দ্যাখেনি, কিংবা চিল-শকুনের শাণিত চোখের ঝলসানো লোলুপতা; নিশ্ছিদ্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে মনসামঙ্গল শুনি, বেহুলার বিলাপে তাই আর্তনাদের বদলে পাই শিল্প-নৈপুণ্য। শীতল-শোণিতের ছোবল নাগাল পায় না আমার, আমি এইচ-টু-ও, স্বাদ-গন্ধ-বর্ণে জেগে থাকি নিশ্চুপ হয়ে। বোবা পাণ্ডুলিপির মতো শ্যাওলা ধরা যাপন, প্রতিটি ভাঁজে ঝরে পড়ে ঘুণে ধরা মনুষ্যত্ব। অলৌকিক স্বপ্নের বারুদগন্ধে খুঁজি দিনবদলের সুখ, হৃদয়ের গহনে জলাতঙ্ক আঁকে ইশতেহার। বুক পোড়া তুষের ধূসর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বায়ুমণ্ডল, সিলিন্ডারে অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে দিশেহারা হয় পথ, অচেনা মুখের কোলাজে ক্রমশঃ দমবন্ধ হয়ে পড়ে কবিতা। প্রাণপণ চিৎকারে এবার চিতা ছাড়ি... "দাদা, ও দাদা... একটু প্লাজমা হবে?"

শোষক

  #শোষক ।।তৃণময় সেন।। "চল কবাডি তারা, নিতাই আমার শালা, বংশী আমার গুণের ভাই, টিকি জ্বালাইয়া তামাক খাই, তামাক খাই, তামাক খাই, তামাক খাই....." রুদ্ধশ্বাসে পিঙ্কিকে ধাওয়া করছে রুশনা। ক্ষিপ্র বেগে ডান হাতটা ছুঁড়ে দিচ্ছে বারবার। দৌঁড়ানোর তীব্রতায় তার শরীরটা ধনুকের মতো সামনের দিকে উত্তুঙ্গ হয়ে আছে। কিশোরী শরীরের নারীত্ব হালকা হলেও বেশ স্পষ্টভাবেই ধরা দিচ্ছে। মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান, পিঙ্কির জামা মধ্যমাটা বুঝি ছুঁয়েই ফেললো। কিন্তু আর দম ধরে রাখা যাচ্ছে না, গলার পাশের রগ ফুলে উঠেছে। দম ছেড়ে দিলে পিঙ্কিরা দলবলসহ ওকে ছুঁয়ে ফেলবে। বন্দী খেলার এটাই তো নিয়ম। না, আর পারা যাবে না। অনেকক্ষণ ধরে দম ধরে রাখার দরুন সরল কৃষ্ণকায় মুখখানা থমথমে রক্তিমাভ হয়ে উঠেছে। পিঙ্কিকে ধাওয়া করা ছেড়ে পিছন ফিরে এইবার নিজের দলের বৃত্তে ফেরার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে রুশনা। শ্বাস ধরে রাখার ক্ষেত্রে এইবার আত্মসমর্পণ করে তার ছোট্ট ফুসফুস। "তামাক খাই, তামাক খাই"-এর মাঝে মিলিসেকেন্ডের শ্বাস নেওয়ার ব্যাপারটা ধরে ফেলে প্রতিদ্বন্দ্বীরা। -- উয়া ছাড়ছে রে, উয়া ছাড়ছে। টেঁপি-ভুতু-রমিজ আউগাও রে!! চিৎকার-চেঁচামেচিতে ...

ভ্যাকসিন

#ভ্যাকসিন ।।তৃণময় সেন।। গুরুগম্ভীর চালে গর্জনের পরই মাঝারি ছাঁটে ঝরতে আরম্ভ করলো আকাশ। বিশাল অর্জুন গাছের ডগা থেকে ধরে মোবাইল টাওয়ারের চূড়া, সর্বত্র ধূসর কালো মেঘের একাধিপত্য। সারা দিনের ভ্যাপসা গরমের হয়তো এটাই কাঙ্খিত পরিণাম। লক ডাউনের সময়কাল তিন অঙ্কে পৌঁছেছে। দেশ-দুনিয়া জুড়ে লক্ষ-লক্ষ বিজ্ঞানী করোনা দানবের প্রতিষেধক বের করতে রাত-দিন এক করে দিচ্ছেন। কিন্তু এখনও অবধি টিকা বা ভ্যাকসিন 'ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের' খবর হয়ে সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় ঘুরছে। জনজীবনে কবে আসবে, কেউ তা জানে না। আক্ষরিক অর্থে, শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ভয়ে ভয়ে ছন্দে ফিরছে শহর। সীমিত কর্মচারীসহ স্থায়ী দোকানপাট খুলে গেলেও, ফুটপাথের ধারে পুরানো কাপড়-জামা, চিনেমাটির বাসনপত্র, প্লাস্টিকের ফুলদানি নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকা হাবুল, শামসুল, ঝন্টু কারোরই দেখা নেই। চোখে পড়ছে না দু-পাঁচ টাকার আশায় মানুষের কাছে হাত পাতা, দশ টাকায় তিনটে কলম বিক্রি করা, অটোরিক্সার পেছনে লাফ দিয়ে লটকে পড়া ডানপিটে ছেলেপুলেগুলো। হেঁকে-ডেকে, কলরবে ইঁদুর দৌঁড়ের শহরকে যারা প্রাণবন্ত করে রাখতো...

শারদ সুজন

  বাঙালির প্রাণের ঋতু শরৎ এখনও পেঁজা মেঘের ভেলা চড়ে দেখা দেয়নি হৃদয় আকাশে, কাশবনে হয়তো সফেদ কুঁড়ি সদ্য ফোটা শুরু হয়েছে। অতিমারীর করাল ছায়ায় উদভ্রান্ত পথিকের মতো হাতড়ে বেড়াচ্ছি আগমনীর শিশিরভেজা সুর। দুঃস্বপ্নের দিনগুলো কবে শেষ হবে আমরা কেউ জানি না। অহরহ দুঃসংবাদের সাথে 'নিউ নরম্যাল' যুগে বেঁচে থাকার রসদ হিসাবে অফুরান জীবনীশক্তিই হয়তো আমাদের একমাত্র সম্বল। সামাজিক দূরত্বের সাথে মানসিক দূরত্ব যাতে হেরে না যায়, সেই ব্যাকুলতায় বিগত কয়েক মাস ধরে সঙ্গবদ্ধ হয়ে থাকার ফন্দি-ফিকির কম আঁটিনি আমরা। সোস্যাল মিডিয়ায় নানা বিষয়ে লাইভ কার্যক্রম থেকে শুরু করে গল্প-কবিতা-গানের সন্ধ্যায় কিছুটা হলেও বর্তমান পরিস্থিতি থেকে অবাধ্য মস্তিষ্ককে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি তথা সামাজিক বিভিন্ন রকমের কাজের সাথে যুক্ত প্রচারবিমুখ, নিরলস স্বজনদের সম্মাননায় " #শারদ_সুজন " নামের অভিনব কার্যক্রমটি কবি-গল্পকার-সংঘটক শ্রদ্ধেয় #বিদ্যুৎ_চক্রবর্তী মহাশয়ের সৃজনী চিন্তাধারার সফল প্রয়াস। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন গুণীজনের মরমী কলমের ছোঁয়ায় এইরকম অনেক নীরব প্রেমীর সাথে পরিচিত হয়েছি, যাঁদের অবিচল...

আইসোলেশন

  আইসোলেশন জংধরা বেঞ্চটিতে এখন আর কেউ বসে না কত বর্ষা-শরৎ মেখে একে একে চলে যায় হলুদ বিকেল; অবুঝ শৈশব বেয়ে প্রগলভ আজ শাল-জামরুল, দরাজ পাতার বুকে সব অন্যান্য গল্প। পরিচিত সবুজ গন্ধের সিঁড়ি বেয়ে উড়োচিঠি ভাসে, দু'মুঠো কথার শেষে, 'ভালো থেকো প্রিয়তমাসু' কত পথ পেরিয়েও টিমটিম জ্বলে সাঁঝবাতি, ঝিঁঝিপোকার কলরব সারাটা শরীর জুড়ে। বাঁশপাতার ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দেয় শীতমাখা রোদ ভিজে ঠোঁটের মতো পলি ঘেঁষে সীমান্ত পার হয় নদী; প্রবাহমান ঘোলা জলে হাতড়ানোর নামই বুঝি জীবন, স্বপ্নছাড়া রাতের নাম 'আলো' হয়ে থাকে যদি! হাত-পা ছড়ানো গায়ে উন্মুক্ত হয় ক'জোড়া ঘাসফুল লোহার হাতল বেয়ে মাটিতে মিশে যায় ধাতব জল; ক্রমশ আলো কমে আসে দিগন্তের রক্তজবা পথে আইসোলেশনে হৃদয়, তাই বেঞ্চটি ক্ষয় হতে থাকে, রো-জ-দি-ন..

তবু আগমনী বাজে..

  তবু_আগমনী_বাজে .. শরতে আজ অকাল গ্রীষ্ম, জ্বলে ছাই হয়েছে পৃথিবীর ফুসফুস। কংক্রিটের চক্রব্যুহে অহরহ লুটিয়ে পড়ে উপেক্ষিত সবুজ। আমাজনে জ্বলন্ত শিখা সেজেছে প্রলয়ঙ্করী সাজে, ধোঁয়াশায় রুদ্ধশ্বাসে, মনের আকাশে তবু আগমনী বাজে। টেলিভিসনে চলে যুদ্ধ মহড়া, রাজারা আঁটে জেতার ফন্দি। নিঘুম চোখে প্রভাত প্রতীক্ষায়, ডিটেনশন ক্যাম্পে কত বন্দি ! ভাতের বদলে জাত-পাতের চাষ, উনুনে ছড়ায় তীব্র ঝাঁঝে, আতঙ্কে যত পিলসুজ মরে, বাস্তুহারার বুকে তবু আগমনী বাজে। মায়ের আবাহনে আবেগী বাঙালির মলিন মুখেও হাসি, অদূরে কোথাও খেলে কাশফুল, ঝরে শিউলি রাশি রাশি। এবড়ো-খেবড়ো পথের মতো মনের ক্ষত ঢাকে সহজে, উঁইপোকারা বেড়ায় লিগ্যাসির খোঁজে, তবু আগমনী বাজে। হৃদয়ের গহনে হাতড়ে বেড়াই সুখস্মৃতির সেই সহজিয়া পথ। প্রবাসী সন্তান যখনই ফিরে মায়ের কাছে তখনই শরৎ। রূপসী আমার গ্রাম বাংলা ধরা দেয় অলীক স্বপ্নমাঝে, প্রবাসী চোখে মায়ের স্মৃতিতে তবু আগমনী বাজে।

শরৎ

  #শরৎ একমুঠো সাদা ভাতের স্বপ্ন ভেজা ভোরে, বর্ষা শেষে শরৎ আসে। রঞ্জনদের উঠোনকোণে নিঃশব্দে ঝরে শিউলি, পথে বিজ্ঞাপন সহ শারদ শুভেচ্ছা। বাঁশের বেড়া বেয়ে আকাশ ছুঁতে চায় নীলকণ্ঠ, বাছুরের গলায় টুংটাং ঘণ্টি, চোখের ওপারে সদ্য পোয়াতি ধানের ক্ষেত, গাঢ় সবুজ, বীজ ভরা বুক। সন্ধ্যা প্রদীপের চিবুক বেয়ে হারায় হিমেল হাওয়া দূরে কাশ-বনঝাউয়ের শরীরে জোনাকির পরব; চুপকথা আর টিমটিম আলোর ছয়লাপে, অপার্থিব শরৎ পৌঁছে যায় গ্রহ-নক্ষত্রের সীমানায়। দিনগুলো কখনো মানব চরিত্রের মতোই জটিল... ঝরা আষাঢ় শেষে টুকরো মেঘ থমকে থাকে অর্জুন গাছটির ডগায়; কখনও বা কাঠফাটা নিঠুর চৈত্র দুপুর অথচ দিনশেষে কুয়াশার আস্তরণে দূরের পাহাড় ধূসর হয় আরও... ঠিক রঞ্জনদের যাপন-স্রোতের মতো।

ত্যাজ্যপুত্র

ত্যাজ্যপুত্র   সারারাত ঘুম হয়নি বছর বাষট্টির প্রৌঢ় পিতাম্বরের। মর্নিং ওয়াকে যেতে ইচ্ছে না হলেও বাদ দিলে চলবে না, ডাক্তারের কড়া নির্দেশ। দোতলার বারান্দার আরামকেদারায় বসার পর মিনিট পাঁচেক চোখ জ্বালা করলেও শরৎ ভোরের স্নিগ্ধতায় তার সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে গেছে। চোখের আদর পূবের রক্তজবা আকাশ ছুঁয়ে একটু নিচে নামলে নবীন সবুজ প্রাণে সাড়া জাগায়। দূরে ধানক্ষেতের মাঠের বুকে হাওয়ার দোলা মনটাকে শিশিরভেজা সকালের মতো স্নাত করে দেয়। সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। পাশের বালিশে মৃন্ময়ীর দু’চোখ সারারাত নিঃশব্দে ঝরলেও বাইরের টুপটাপ ঠিক কানে আসছিলো তার। ​ --তুমি দেখো, ছেলেটাকে বিয়ে দিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ​ ছেলের সাথে সোজাসুজি কথা না বলা পীতাম্বর মৃন্ময়ীর আবদার বেশি দিন উপেক্ষা করতে পারেননি। বাপের ওপর অঙ্কিতের যেন বহু জন্মের ক্ষোভ। বন্ধুদের সাথে পার্টি করে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ করলেও, তাকে কোনোদিন জবাব দিতে যাননি তিনি। সেটা কি পুত্রস্নেহ নাকি অবচেতন মনের কোনো পাপবোধ! কিন্তু তিনি তো সেইরকম কোনো ভুল করেননি! এতকালের দুর্বলতাটা তাহলে কিসের ছিল? পাখির কলকাকলিতে শিউলি পাতার ফাঁকে সকাল আসে। ​ গ্যারেজের বুড়ো মে...