*মহামারীর পদধ্বনি এবং একটি বিষধর*

*মহামারীর পদধ্বনি এবং একটি বিষধর*

।।তৃণময় সেন।।

 

. বাপরে! আরেকটু অইলে পায়ের তলে পড়লো নে।

 

কুচকুচে কালো বিষধরটা সুপারি গাছের তলায় ওঁৎ পেতে ছিল। নির্ঘাত ব্যাঙ বা ইঁদুরের গন্ধে এসেছে। মাত্র দু'হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যন্ত সাইকেলের পুরোনো টায়ার ভাবছিল নন্দু। গাটা শিরশির করে উঠলো। আলদ সাপে কাটলে নাকি চিকিৎসার সময়টুকুও পাওয়া যায় না! বিড়বিড় করে ক'খানা বিশুদ্ধ দেশীয় গালির সাথে একটু দূর থেকে আধলা ইঁট ছুঁড়ে মারলো সে। লেজের দিকটাতে গিয়ে পড়লেও চোখের নিমেষে নালার দিকটায় হারিয়ে গেল সাপটা। সাপ দেখে সহসা পায়ে লাগাম দেওয়ায় হাতে মগের জল অর্ধেকটা ছলকে পড়ে গেছে। একে পেট ভরে খাওয়া হয়নি, তার ওপর এই সাপের জ্বালা। কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনাটা মাথার মধ্যে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। “ইগু মানু তো বাইরা লাগের বা/কেউ পুলিশে খবর দেও/হরিয়া দাঁড়াও, না অইলে বাদে হকল মরবার…” নন্দুর কানে বাজছে ভিড়ের টুকরো সংলাপগুলো।

 

তরকারিতে নাড়িভুঁড়ি পোড়া ঝাল দিয়েছে মা। এক তরকারির খাওয়াতে ঝাল না দিলে সবার পোষাবে না, তাই বলে এত্তো ঝাল! হাঁড়িতে কয়েক জাতের চাল একসাথে পড়ায়, কিছু ভাত বেশি সেদ্ধ তো কিছু ভালোভাবে ফোটেইনি। ইরি, রঞ্জিত, বোরো ধানের চালের সাথে পাঞ্জাবের বস্তার চাল মিলিয়ে রাঁধলে যা হওয়ার ছিলো, তাই হয়েছে। গ্রামের লোকের কাছে টাকা-পয়সা ফুরিয়ে আসছে। তাই চালের বদলে শুঁটকি নিতে আসলে মানা করে না নন্দু। 'খানা পেটে দুবেলা ভাতের যোগান দিতে গেলে অতশত ভাবলে চলে না। বর্ষাকালে শুঁটকি বেশিদিন ঘরে ফেলে রাখলে আবার ফাঙ্গাস ধরে যায়। রেশনের অখাদ্য চালগুলি দিয়ে নন্দুদের বাড়ি থেকে পুঁটি, ফাইস্যা, চিংড়ির শুঁটকি নিয়ে গেছে মনুর মা, মছকন্দররের বৌ, কালুয়া পরেশরা।

 

-- মাছ-কাছ না থাকলে হুকনির গন্ধে দুই গোরাস ভাত খাওয়া যায় বা!

"শরীল ভালা আছেনি বা কাকা"- উত্তরে বলে কালুয়া পরেশ। সামনের মানুষটা কী জিজ্ঞেস করছে, তা নিয়ে পরেশের মোটেই মাথা ব্যথা নেই। ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে নিজের মনমতো যা কিছু একটা কল্পনা করে উত্তর দিয়ে দিলেই হলো। বয়ড়া লোকটির সাথে তাই বিনা কাজে প্যাচাল পাড়তে যায় না কেউ।

বাড়ির সামনে মৃতিঙ্গা বাঁশের ছোট অথচ ঝাঁকড়া ঝাড়খানা কেটে সাফ করে দেওয়ার পর থেকে ইএনডি-তে দাঁড়িয়ে সামনের ঘরটার ভিতরের সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়। বাঁশের বেড়া না হোক পলিথিনের একখানা ত্রিপল দিয়েও তো একটা হালকা পর্দা দেওয়া যেত! করব-করছি বলে তিন মাস কাটিয়ে দিলো নন্দু।

-- তোর বইন দুইটা বেটা বিয়ার লাখ অইগেছইন, মাত এখান তো কইলে কানে দিয়া হামায় না!

 

মায়ের কথায় পাত্তা দেয় না নন্দু। গত ফাল্গুন মাসে পলাশ-শিমুলের সাথে নন্দুদের মৃতিঙ্গার ঝাড় জুড়ে সাদা ফুল এলো। বাঁশে ফুল আসলে নাকি গৃহস্বামীর চরম অকল্যাণ হয়! বাড়িতে যেই আসে, সেই হৈ হৈ করে ওঠে ফুল দেখে।

 

-- ফুটতো আছিল বিয়ার ফুল, কিন্তু ফুটলো দেখো বাঁশো ফুল! হায়রে পুড়া কপাল আমার!

 

চোখের জলে আঁচল ভেজায় নন্দুর মা। বাঁশঝাড়খানা সমূলে উপড়ে ফেলে দিলেও 'দিন বাদে নদীর ঘাটে পড়ে গিয়ে পা একখানা ভেঙে বিছানা নেয় নন্দুর বাবা বলরাম দাস।

মাঝবেলার আকস্মিক ঘটনাটি বেলা গড়ানোর সঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি নন্দু। সম্পূর্ণ বিনা দোষে তার নামখানা জড়িয়ে গেলো। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাইকেল নিয়ে সোজা বাড়িতে ঢুকে রুদ্ধশ্বাসে নন্দুর নাম ধরে ডাক দেয় তার বাল্যবন্ধু সাম ওরফে সামসুদ্দিন। প্রতক্ষ্যদর্শীরা সবাই একবাক্যে নন্দুর নাম নিয়েছে, ব্যাপারটা এতোটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে যে বাড়িতে পুলিশ আসার আশঙ্কা একেবারে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না।

 

-- আমার বাড়িত চল বেটা, পুলিশে লইয়া গেলে বাদে তরে ছুটানিত কেউ যাইতো নায়। কলিতা দারোগা হুনছি খুব গরম। মাইর ধইর করলে কিতা করবে চাই!

 

বেলা এগারোটা নাগাদ তেমাথা থেকে তেল-চিনির মতো খুচরো রেশন নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কান্ডটা ঘটে। সরকারি হাসপাতালটা পার হচ্ছিল, ঠিক তখনই "আউগাও রে...আউগাও... ধর রে ধর!" শুনে পেছন ফিরতেই হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে আসা লোকটিকে দেখতে পায় নন্দু। পিচভাঙা এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় পালাতে গিয়ে ভীষণ জোরে হোঁচট খেয়ে ওর থেকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়েছে। হাতের থলে রাস্তার পাশে রেখে লোকটির কোমরে জোরসে জড়িয়ে ধরে সে। পনেরো-কুড়িজনের একটা গোলাকৃতি ভিড় ওদের দুজনকে ঘিরে ধরেছে। অসীমের ফার্মাসি থেকে ততক্ষণে কেউ একজন শক্তপোক্ত রশি নিয়ে এসেছে। লোকটা কিছু একটা বলতে চাইছিল, কিন্তু কে শোনে কার কথা! হাত দুটো পেছন দিকে বেঁধে দিয়ে সবাই হাসপাতালে নিয়ে গেলো দূর থেকে নতূন ডাক্তারবাবু সবাইকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব-টুরত্ব তখন কারও মাথায় নেই, তরুণ ডাক্তারটির কথা কেউ কানেই তুললো না।

 

তার পরের ঘটনা কিছুই জানে না নন্দু। ছিঁচকে চোর-টোর ছিল হয়তো। তবে লোকটা এখানকার নয়। চ্যাপ্টা মুখ, ভাসা ভাসা চোখ। বাজারের থলে নিয়ে সোজা বাড়ি চলে এসেছিল সে। ফেরার পথে মনে বাসা বাঁধছিল কত অজানা কৌতূহল। বিকেলবেলা একবার অসীমদার ফার্মেসিতে খোঁজ নিলে সব খবর বিশদে জানা যাবে।

 

. বাড়ি ফিরে সারাটা বিকেল ছাদে পায়চারি করে কাটিয়ে দিলো দেবু। নতুন জায়গায় এসে একি উটকো ঝামেলায় পড়লো! দু-একজন মানুষ ছাড়া কাউকে তো সে চেনেও না। যদিও আজকে পুলিশ আসেনি, তবুও অথরিটি জিজ্ঞেস করলে কারোর নাম সে বলতে পারবে না। সামনাসামনি আঙুল দেখিয়ে মানুষ শনাক্ত করাটা ঠিক হবে না। চাকরিটা তো এই গ্রামেই, পথে-ঘাটে এমনকি চেম্বারে এসেও যদি কেউ হাত-টাত তোলে; তখন কী হবে! নিজের ভবিতব্য কল্পনা করে ঢোক গেলে দেবু ওরফে ডক্টর দেবজ্যোতি ধর।

চাকরি জয়েন করার 'দিন পরেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই হাসপাতালে পোস্টিং হয় দেবুর। শহর থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটারের রাস্তা। গাড়িখানা গ্যারেজে পড়ে থাকলেও যাতায়াত করার জন্য দু-চাকাই তার বেশি পছন্দের। যে পেশাটাকে ছেলেবেলা থেকে জীবনের লক্ষ্য করে বড় হওয়া, সেই পেশায় যোগ দেওয়ার পরে নিজেকে দুনিয়ার সবথেকে সুখী মানুষ বলে মনে হয়। শ্রীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা প্রতিজন রোগীকে নিজের একান্ত আপনজন ভেবে যত্ন নেয় সে। কম সময়েই স্থানীয় লোকজনের ভালোবাসার পাত্র হয়ে উঠেছিল এই নতুন ডাক্তারবাবু। তিন-চার মাস অবধি স্বপ্নের মাঝে জীবন বেঁচেছে দেবু। সুখের দিনগুলোতে ভূত হয়ে দেখা দিল করোনা মহামারী।

 

প্রচণ্ড কাশতে কাশতে লোকটা যখন চার নম্বর ওয়ার্ডের ওপিডিতে ঢুকল, তখনই সন্দেহ হয়েছিল। হালকা শ্বাসকষ্টের সাথে ধুম জ্বর। গায়েও ব্যথা আছে, মাথা নাড়িয়ে উত্তর করেছে সে ডাক্তারবাবুকে। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে কথা বলায় সন্দেহ হয় দেবুর। কোথা থেকে এসেছে জিজ্ঞেস করলে কাঁচুমাঁচু করে কথা কাটাতে চাইছিল। লোকাল নার্স শিপ্রাদিকে ডাকতে গেলে হুড়মুড়িয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে বাইরে যেতে উদ্যত হয় লোকটি। "অরে ভাইয়া কাহাঁ যা রহে হো" বলতেই দৌঁড় শুরু করায় অফিস স্টাফদের হাঁক পাড়ে দেবু। তবে লোকটি বেশি দূর যেতে পারেনি। একটু দৌঁড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তেই গ্রামের মানুষজন ওকে জাপটে ধরে।

 

. হাসপাতালের ঠিক সামনাটা জনশূন্য হলেও চোখের অদূরে ছোটখাটো জটলা লেগেই আছে। ভাবটা এমন যেন শুধু হাসপাতালের সামনে এসে দলবদ্ধ হলেই করোনা আক্রমণ করবে! একটু আড়ালে আবডালে গিয়ে কোলাকুলি করলেও কিছু হওয়ার নয়। একশ আটের অ্যাম্বুলেন্স এসে শিলচর মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেছে লোকটাকে। টেস্ট করার পর রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 

-- ইগু মানুষ খাসিয়া পুঞ্জির। অতদিন ব্যবসা করিয়া যদি মানু চিনতাম না পারি, তে কিওর ব্যবসা করলাম!

 

কাঁচাপাঁকা চুল, থুতনিতে সামান্য দাড়ি, কোটরাগত ধূর্ত দুটো চোখের অধিকারী আতিকুর রহমান ওরফে আলু বুক ঠুকে সবার কাছে নিজের মানুষ চেনার অভিজ্ঞতা জাহির করে একটা সময় খাসিয়া পুঞ্জি থেকে গ্রামের বাজারে পান এনে বিক্রি করতো। হঠাৎ করে ব্যবসা লাটে উঠলো। নির্ঘাত পুঞ্জিতে কাউকে ঠকিয়ে এসেছে, তাই আর ওমুখো হয়নি বলে দৃঢ় বিশ্বাস গ্রামের মানুষের। মার্কামারা ঠগ, বেইমান, চোর হিসেবে সবাই চেনে আলুকে। মুখের ওপর না বললেও 'আলু চুর' নামে আশপাশের দু-তিন গ্রামে কুখ্যাত সে। -দুশো টাকা থেকে শুরু করে দশ-বিশ টাকা পর্যন্ত গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছ থেকে ধার নিয়ে রেখেছে সে। নিজেকে 'ব্যাপারী' বলে পরিচয় দিলেও বাজার দিন বাদে সপ্তাহের বাকি দিন গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাড়িগুলোতে নারিকেল/সুপারি পেড়ে দেওয়া, ঘাস-জঙ্গল সাফ করা, বাঁশের বেড়া দেওয়ার মতো দিনমজুরির কাজ করে আলু। আর বাজার দিনে গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে হাঁসের ডিম, মুরগির ছানা, পাকা কলার ছড়ি জলের দামে কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করার সাথে ছোটখাটো দালালি করে পরিবারের পেট ভরায় সে। হাতসাফাইয়ের শিল্পটার সুযোগ পেলে যে সদ্ব্যবহার করে না তা কিন্তু নয়, যদিও বয়সের সাথে তা অনেকটা কমেছে।

ঘটনাটা যখন ঘটে, তখন ঘোষবাবুর বাড়িতে উঠোনের চারপাশের ঘাস-জঙ্গল সাফ করছিল আলু। ঘোষ গৃহিনী চোখে চোখে রাখেন আলুকে। হাতসাফাইয়ের জন্য কিছু না পেলে যাবার সময় ঢিল ছুঁড়ে অন্তত দুটো আমই নিয়ে যাবে। কাজের মানুষ পাওয়া যায় না বলে আলুর মতো চোর-ছ্যাচড়কেই মাথায় বসাতে হয়! 'দিন আগে কচুবনটা কেটে সাফ করে নিয়ে গেছে। কী সুন্দর কচুর লতি হয়েছিল!

-- আপনে পয়সা দিয়া কিনিয়া খাইতে পারবা দিদ্দি, আমি গরিব মানুষে অন থনে লইয়া গেলে আমার বাচ্চাইনতে খাইবা।

লালচে দাঁতের পাটি বের করে ঘোষ গিন্নিকে বলে সে। প্রত্যেকবার ন্যায্য পয়সা থেকে বেশিই দেওয়া হয়, তবুও বদমাশটার পেট ভরে না। কর্তা সব জেনে বুঝেও চুপ থাকেন, তাই আরও মেজাজ খারাপ হয় গিন্নীর।

 

. চিৎকার, চ্যাঁচামেচি শুনে যখন হাতের কোদাল রেখে আলু পথে বেরোলো, তখন শক্ত হাতের বেষ্টনীতে লোকটাকে পেঁচিয়ে ধরেছে ছাব্বিশ বছরের যুবক নন্দু। সবাইকে সরিয়ে দিয়ে গলাটা ঝেড়ে নিয়ে নিজের জানা গুটিকতক খাসিয়া শব্দ প্রয়োগ করে লোকটার নাম, ঠিকানা জানতে চাইলো আলু। বোঝা গেলো লোকটা অরুণাচল থেকে এসেছে। পাশের গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি। কয়েকদিন হয়ে গেলো জ্বর ছাড়ছে না তাই..... ভিড়ের ঠ্যালায় কিছু বোঝা গেলো না আর। জ্বর, কাশি, গায়ে ব্যথা তো করোনার লক্ষণ! লোকটার নিশ্চয়ই করোনা হয়েছে, তা না হলে এইভাবে পালাচ্ছিল কেন! আলুর অকাট্য যুক্তিতে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেয় নুরুল ওরফে ঘোড়াওয়ালা। অবশ্য সায় দেওয়ার কারণ নিছকই আলুর যুক্তি নয়; কথায় সহমত হলে বিড়িতে দু'টান দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, যা হাতছাড়া করার মোটেই ইচ্ছে নেই ঘোড়াওয়ালার।

হাসপাতালের সামনে অর্জুন গাছটার নিচে সারা দিন বসে থাকে আশি বছরের বৃদ্ধ নুরুল। দেশে করোনা আসার বহু বছর আগে থেকেই নিজের অজান্তেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আসছে সে। কালো দাঁতগুলো নড়ে গেলেও পড়ে যায়নি, দুর্গন্ধে ভরা মুখে অনবরত বকবক করে চলে সে। শীত-গ্রীষ্ম বারো মাসই গায়ে সেই একই সাদা থেকে ধূসর হওয়া ফুলহাতা জামানীল চেকের লুঙ্গি। শীতের সংযোজন বলতে পাতলা একটা ব্ল্যাঙ্কেট, যা বছর খানেক আগে গ্রামের ক্লাব বিতরণ করেছিল। সারাদিন বসে থেকে আল্লাহর নামে সিকি-আধুলি যা পায়, তা নিয়েই সে বাড়ি ফেরে। নুরুলের কাছে এককালে পৈতৃক একখানা ঘোড়া ছিল। তা নিয়ে আজও গর্বের অন্ত নেই তার..

 

-- কাবুলিয়ে আব্বারে দিচলা চান্দকপালি এক ঘোড়া। রঙে বাদামী, একগোছা বড় লেইঞ্জ, হকল বেটারে পিঠো বইতে দিতো না।

 

পোলাপানরা মুগ্ধ হয়ে বুড়োর গল্প গিলতো। সামান্য উৎসাহ পেলে গল্পের ঘোড়াকে নিয়ে সাত সমুদ্র পারের কিসসা শোনাতো নুরুল।

 

--একবার পড়ছিল অলা জব্বর শীত। হেস রাইত আস্তা গাউ যখন নাক ডাকাইয়া ঘুমাইত্রা তখন রাতাবাড়ি থাকি আছইন ডাকাইতর দল! কালা কাপড়ে বান্ধা মুখ, লাম্বা বন্দুক পিঠো। আমরা হরুতায় ডরাইয়া কান্দা ধরছি তখনউ ঘোড়ার পিঠিত বইয়া আচখালর ওবায় থনে বার হইছইন আব্বা! চাদরর তলে জিওলর ডাল বন্দুকর লাকান চোখা করিয়া একেরে ডাকাইত দলর মুখোমুখি!

 

"আমি থাকতে ছিরিপুরর জমিনো কুনু বেটায় কুনতা করতে পারছইন না আর পারতা নায়!"

রশিত ধরি টান দিতেউ ঘোড়ায় সামনোর পা দুইটা তুলি দিছে ডাকাইত সর্দারর বুকুত। বেটায় চাক্কু, বন্দুক হাবুইতা থইয়া আব্বার পা' ধরিয়া মাপ চাইলো। আর জিন্দেগিত ছিরিপুর মুখা কুনো ডাকাইত আইছন না।

 

এক বৃষ্টির রাতে নাকি রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় স্বনামধন্য নেতা আলতাফ হুসেনকে ঘোড়ায় বসিয়ে শিলচর পৌঁছে দিয়েছিল এই ঘোড়াওয়ালা। অদম্য সাহসের এই গল্প শ্রীপুরবাসীকে অন্তত কয়েকশত বার শুনিয়েছে সে। হাসপাতালে পুলিশ আসবার গুজবে ঘোড়াওয়ালারও টনক নড়েছে। কলিতাকে বেশ ভয় পায় সে। এনআরসি ভেরিফিকেশনের জন্য একবার মুখোমুখি হয়েছিল কলিতার। জমির কাগজে তার নাম মোঃ নুরুল ইসলাম, কিন্তু ছেলেপুলের জন্মের প্রমাণপত্রে নাম দিয়েছে নুরুল ইসলাম লস্কর। কাঁপা হাতের সইয়ে আবার মোঃ লিখেছে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিল কলিতা।

-- তোক কেলা বাংলাদেশী সজাই জেলত পঠাব লাগে! কেলা অশিক্ষিত মূর্খ মিঞা।

চরম অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে ফিরে এসেছিলো ঘোড়াওয়ালা। টাকা-পয়সা না থাকলেও এতোটা অসম্মান কোনোদিন কেউ করেনি। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়েছিল সেইদিন।

 

. আসল মুশকিলটা তখন হলো, যখন হাসপাতালের তরফ থেকে জানতে চাওয়া হলো যে লোকটাকে কে কে ধরেছে বা ছুঁয়েছে। রোগটা যেহেতু খুব সংক্রামক, তাই এইক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা তো নিতেই হয়। নামগুলো জানা গেলে রোগীর সংস্পর্শে আসা লোকজনকে ঘরে কিংবা হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। ধরা-বাঁধা করার সময় এতগুলো মানুষের ভিড় ছিলো, কিন্তু খাসিয়া লোকটিকে ছোঁয়ার ব্যাপারে সবাই একবাক্যে মানা করলো। নিজেকে বাঁচাতে কেউ কেউ তো অকুস্থলে ছিলই না বলে সাফ জানিয়ে দিলো। সবাই সবকিছু জানে অথচ ওইদিন ময়দানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে ডাহা মিথ্যে বলতে কারও ঠোঁট অবধি কাঁপল না! গ্রামের পঞ্চায়েত প্রতিনিধি বিশ্বম্ভর পাল ওরফে বিশু সেই সময়টাতে সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পাশের দোকানে চা খাচ্ছিল। পরিস্থিতির উত্তপ্ততা তাকেও ভিড়ের মাঝে টেনে নিয়ে আসে। সাথের ছেলেরা লোকটিকে ধরাবাঁধা করতে হাতও লাগিয়েছে। আর সেটা কেউ একজন প্রতিপক্ষের পুলক সরকারকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়ায় বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ব্যাপারটা।

দুটো গ্যাস এজেন্সি, পেট্রোল পাম্পের মালিক পুলক সরকার ঘাগু লোক। সাদা ব্যবসার পেছনে কয়লার কালোবাজারি করে সে অনেক টাকা-পয়সা বানিয়েছে বলে নিন্দুকরা দাবি করে। দারোগা রঘুনাথ কলিতার সাথেও খুব খাতির তার, প্রতি শনি-রবিবার রাতে মদ-মাংস দিয়ে পার্টি করতে পুলকবাবুর অফিসে যায় কলিতা। বিশুকে এইভাবে হাতের মুঠোয় পেয়ে কি ছেড়ে দেওয়া যায়! তাই ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামে মহামারী ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিশুর নামে থানায় কেস ঠুকেছে পুলক সরকার। বিষয়টা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কাল সকালে পুলিশ আসার খবর রটে গেছে গ্রামজুড়ে।

 

জোর করে কাশি আটকাতে গেলে চোখ-মুখ লাল হয়ে আসে। দু'দিন থেকেই খুসখুসে কাশিতে ভুগছিল নন্দু। ঘটনাটা ঘটার পর থেকে গা-টাও গরম গরম লাগছে। রাতে ঘুমটাও ভালো হয়নি। স্বপ্নে সাপটা ফণা তুলে এগিয়ে আসছে দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠেছে সে। দরদর করে ঘামছিল। বাকিটা রাত বসেই কাটিয়েছে, নিশুতি রাত জুড়ে যেন শুনতে পাচ্ছিল সাপের হিসহিসানি। এইসব নাকি ভয় হওয়ায় মনে হচ্ছে, সাম তার কোনো কথায় পাত্তা দেয় না। স্কুলজীবন থেকে সামের সাথে বন্ধুত্ব। পুনেতে যখন গেলো, তখন সামকে হিন্দু বলে পরিচয় দিয়ে একসাথে থেকেছে, একপাতে খেয়েছে দুই বন্ধু। বড় শহরের উঁচু বিল্ডিংগুলোতে রঙ দেওয়ার কাজ করতো দুজনে। সাড়ে চারশো টাকা করে রোজ পেত। থাকার ব্যবস্থা ছিল কোম্পানির তরফ থেকে। খাওয়া খরচা বাদে প্রতিমাসে হাজার পাঁচেক টাকা বাড়িতে পাঠানো সম্ভব হতো। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল জীবনে, শুধু যেদিন সমস্তিপুরের সাথী ছেলেটি কয়েকশো ফিট ওপর থেকে পা ফসকে ধ করে পড়ে মারা গেলো, সেদিনই সব থেমে যায়। বকেয়া টাকা-পয়সা নিয়ে একবার বাড়ি ফিরে আর ওইমুখো হয়নি দুজনের একজনও। ভাগ্যিস ফিরে এসেছিল, না হলে এই লকডাউনের দিনগুলোতে কি যে হতো! কত লোক ওই দূর-দরাজ থেকে নাকি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথে পড়ে মরছে।

 

-- বাড়িত তো বেটা আধপেটা অইলেও বাঁচিয়া আছস, বারে থাকলে এলকু কিতা ওইতো আছিল ভাবিয়া দেখ।

সামের কথা চুপ করে বসে শোনে নন্দু। হাসপাতালের ঘটনাটা কিছুতেই মাথা থেকে বের করে দেওয়া যাচ্ছে না।

 

কলিতা দারোগা আসার খবর আলুর কানে পৌঁছানোর পর থেকে কেমন যেন গুম মেরে গেছে সদা ব্যস্ত লোকটা। আজকাল কাজকর্ম অনেকটা কম। ক্লাবের ছেলেরা তেল-ডাল-চিনির যে রিলিফ সামগ্রী দিয়ে গিয়েছিলো, তাও প্রায় শেষের পথে। তরি-তরকারি ছাড়া শুধু ভাত তো আর চিবিয়ে খাওয়া যায় না। কয়েক মাস আগে মিথ্যে চুরির দায়ে থানায় ডেকে নিয়ে গায়ে হাত তুলেছে এই কলিতা। হাঁস-মুরগি চুরি করে থাকলেও বাইক চুরির মতো বড় কাজে কখনো হাত দেয়নি আলু। একে তো নিজে সাইকেল ছাড়া কিছু চালাতে জানে না, তার ওপর তখন বউটা অসুস্থ থাকায় ঘর থেকে খুব একটা বেরই হয়নি সে। এই একটা কথা হাজার বার বলে বোঝাতে পারেনি কলিতাকে। ঘোষবাবুর হস্তক্ষেপে সেদিন লক-আপ থেকে ছাড়া পেয়েছিল, না হলে শালা পিটিয়ে মেরেই ফেলতো।

 

. সন্তান-সন্ততির কল্যাণ কামনায় বিষহরির বাড়ি গিয়ে সিধে চড়ায় নন্দুর মা। চৈত্র সংক্রান্তির বাজারে পাঁঠার বাচ্চাটা বিক্রি করার পর হাতে যে 'টা টাকা বাকি ছিল, সেই টাকা দিয়ে সাধুবেটির কাছ থেকে করোনা থেকে বাঁচার তাবিজ নিয়ে এসেছে সে। স্বামী, সন্তানদের জন্য পাঁচখানা তাবিজে 'টাকা লেগে গেছে। বৈশাখ মাসে মেয়ে দেখার জন্য একটি পাত্রপক্ষের আসার কথা ছিল। মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তার আশাটুকু অবহেলার ফুৎকারে নিভিয়ে দিল এই করোনা। টাকা-পয়সা যাও বা যৎসামান্য ছিলো, তা বুড়োর ঔষধপত্রে খরচা হয়ে গেছে। মেয়েগুলোর বিয়ে লাগলে বাপের বাড়ি গিয়ে হাত পাতার সাথে পুকুরটা বন্ধক রাখার কথা ভাবছে নন্দুর মা।

 

জায়গাটা নাকি খুব জাগ্রত; কয়েক বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর হঠাৎ করে কপাল জুড়ে লাল তিলক, একমাথা জটা, গেরুয়া শাড়ি পরে সরকারী ডোবার পারে রূপসী গাছের নিচটাতে বিষহরি বাড়ি স্থাপন করে সাধুবেটি ওরফে শিবানী দাস। তার সঙ্গে জুটেছে এক গাঁজাখোর সাধু। ছানাপোনা নিয়ে একসময় সুখের সংসার ছিল সাধুবেটির। সবজি ব্যবসায়ী বর একবার মাহুর থেকে মাল আনতে গিয়ে আর ফিরলো না। কেউ বলে তাকে উপজাতীয় মানুষরা মেরে ফেলে দিয়েছে, তো কেউ নাকি ওকে অন্য এক মহিলার সাথে মাহুর বাজারে দেখেছে। ঘটনাটির কিছুদিন পর বরমবাবার মেলাতে গিয়ে শিবানীও উধাও হয়ে যায়। মেয়ে দুটোকে ততদিনে তাদের মাসী শহরে নিয়ে চলে গেছে। অনেক বছরের প্রত্যাবর্তনের পর লাল-গেরুয়া বসনের পাশাপাশি সিলেটির বদলে শুদ্ধ বাংলাতে কথা বলে সাধুবেটি। ভাবে বিভোর হয়ে কখনও অট্টহাসি হাসে, তো কখনও হাউহাউ করে কেঁদেকেটে লুটিয়ে পরে মায়ের চরণে। আত্মীয়-স্বজন সবাইকে চিনতে মানা করে দিয়েছে সে। এমনকি মেয়ে দুটোকেও কাছে টেনে নেয়নি। পুরানো সব শেকড়বাকড় ছিঁড়ে ঈশ্বরের কাছে নিজের নতুন জীবন উৎসর্গ করেছে সে।

 

-- বিষরী, বিষরী.. দুধ কলা খাইতায়নি!

 

গ্রামের হাড়ভাঙ্গা বদমাশ ছোড়াগুলো সুযোগ পেলেই ক্ষ্যাপায় সাধুবেটিকে। ততক্ষণ ক্ষ্যাপাতে থাকে, যতক্ষণ সাধুবেটি মেজাজ হারিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ না শুরু করে দেয়। রাগ উঠলে শুদ্ধ বাংলা ভুলে গিয়ে সিলেটি অপভাষায় মুখ খারাপ করে সাধুবেটি।

 

-- তুমরার মার হাইরে দুধ কলা খাওয়াও পুঙ্গির পুয়াইন! মর না কেনে রে ওই হালার জাত। তুমরার বাপে....

 

বিষহরির মন্দিরের পাশাপাশি পাথর বসিয়ে ভৈরব বাবাকে আবাহন করেছে তার সাথের নেশাখোর সাধুটি। নিয়মিত তেল-সিঁদুরের ছোঁয়ায় গম্বুজাকৃতির পাথরটি দূর থেকে চকচক করে ওঠে।

 

. উৎকণ্ঠায় সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও পুলিশের দেখা নেই। ভ্যাপসা গরমে আপাদমস্তক ঢাকা দেবু ঘেমে একসা হয়ে গেছে। করোনার ঝুঁকিপূর্ণ দিনগুলোতে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যদিও মানুষের সেবায় সে প্রাণ দিতেও রাজী, তবুও আজকাল বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মায়ের চোখ মোছার দৃশ্য তাকে ব্যথিত করে। যেহেতু সে' বহিরাগত রোগীটিকে দেখছিল, তাই পুলিশ সবার প্রথমে নিশ্চয় তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসবে। দুদিন আগের স্মৃতি হাতড়ে ভিড়ের চেহারাগুলো মনে করতে চেষ্টা করে ডঃ দেবজ্যোতি ধর।

 

হাসপাতালের সামনে আজকে লোকজনের ভিড় কম। নিতান্ত কাজে আসা মানুষজন ছাড়া নিত্যদিনের আড্ডা দেওয়া চেহারাগুলোর দেখা নেই। অর্জুন গাছের নিচে আজকে আর আসর পেতে বসেনি ঘোড়াওয়ালা। ছেলেদের সাথে বনিবনার অভাব না থাকলে শেষ বয়সে কেউ কি আর ভিক্ষে করতে বসে! বিশু পালের আদেশে চা-ওয়ালা দু'দিন হলো দোকান খোলেনি। গত রাতের ঝড়ে পথের প্রতিটি গর্তে জল জমেছে। আধকাঁচা আম গড়াগড়ি খাচ্ছে গাছতলায়। পুকুর-ডোবা জলে টইটম্বুর। গ্রামের মানুষ ঝাঁকি, পেলইন দিয়ে মাছ ধরার নেশায় মগ্ন হয়ে আছে। ভ্যাপসা গরম আরও বৃষ্টি হওয়ার সংকেত দিচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলে আবার গ্রামের দক্ষিণ দিকটায় মানুষের ঘরে জল ঢুকে পড়ে। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানানোর জন্য শিলচর থেকে এসে সরকারি স্কুল দুটো জরিপ করে গেছে। স্কুলগুলো প্রতি বর্ষাতে এমনিতেই রিলিফ ক্যাম্পে পরিণত হয়, এইবার না হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হবে। কিন্তু করোনা আসায় প্রতি বছরের বাধাধরা বন্যা তো আর থেমে থাকবে না! সেইক্ষেত্রে স্কুলদুটোর ভাগ্যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার না রিলিফ ক্যাম্প আছে, তা নিয়ে বলাবলি করে গ্রামের লোকজন।

 

উড়ো খবরটি অটোচালক ঝলক হয়ে আলুর কাছে পৌঁছালে কেউ প্রথমে পাত্তা দেয়নি। ঢপ মারাটা আলুর চিরকালের অভ্যেস, নিশ্চয় কোনো নতুন ফন্দি আঁটছে ! কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আঁধারের নিস্তব্ধতা ভেদ করা অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ অনেক কিছুই স্পষ্ট করে দেয়। বাজার সংলগ্ন দোতলা বাড়ি থেকে দু'জন লোকের সাথে পুলক সরকারকে স্বাস্থ্যকর্মীরা ধরে নিয়ে গেছে। সাথে বন্দুকধারী পুলিশও ছিল। গতকাল বিকেল থেকেই দেখা নেই রঘু কলিতার। জেলা প্রশাসনের ডাকে গতকাল শহরে যাওয়া হয় তার। সেখানে অফিসে প্রবেশ করাকালীন তাপমান পরিমাপক যন্ত্রে শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তাপ পাওয়ায় তৎক্ষণাৎ টেস্ট করা হয়। টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে, তাই তাকে অ্যাডমিট করার পাশাপাশি শ্রীপুর পুলিশ স্টেশনের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। ছাড় দেওয়া হয়নি গত 'দিনে সংস্পর্শে আসা কাছের জনকেও। পুলক সরকার তাদেরই একজন।

কলিতার করোনা পজিটিভ হওয়ার কেস হাসপাতালের ঘটনাটাকে ম্লান করে দিয়েছে। আপাতত কোনো জেরার মুখোমুখি হতে হবে না, তাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে নন্দু। খাসিয়া মানুষটির আর কোনো খবরাখবর পাওয়া যায়নি। কাশি আজকে অনেকটা কমেছে, জ্বর ভাবটাও আর মনে হচ্ছে না। মায়ের জোর করে বেঁধে দেওয়া তাবিজ খুলে পকেটে রেখে দেয় সে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে পাহাড়লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুঁটকির সাপ্লাই বন্ধ। বাড়ির সামনে তরজার বেড়া দেবে বলে পুকুরপাড় থেকে গোটা দুয়েক জাই বাঁশ কেটে রেখেছে। শুঁটকির গন্ধকে ছাপিয়ে বাড়ি জুড়ে একটা পচা দুর্গন্ধ ভাসছে সকাল থেকে। বড় বড় কয়েকটা মাছিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলে নালার হাঁটুজলে ফুলে ঢোল হওয়া আলদ সাপটির লাশ চোখে পড়ে। সাদা পেট উল্টে ঘোলা জলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে সাপটি। একটা গর্ত খুঁড়ে চাপা দিতে হবে সাপটিকে। সৎকার করতে হাতে কোদাল তুলে নেয় নন্দু।

Comments

Popular posts from this blog

তবু আগমনী বাজে..

#সর্বভুক

শারদ সুজন