Posts

Showing posts from August, 2020

বেলুনওয়ালা

তখন ঘড়িতে মাত্র সাড়ে আটটা, অথচ লক ডাউনের দৌলতে মাঝ রাত মনে হচ্ছে। হেডলাইট স্তিমিত হলে অফিসের গাড়ি থেকে নামলেন নীলেশ। একটা মিটিং থাকায় বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল শহরের জনপ্রিয় সংবাদপত্রের সাব-এডিটর নীলেশ মোহনের। বর্ষীয়ান মানুষটার সাংবাদিকতার প্রতি ভালোবাসা সর্বজনবিদিত। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের পেশায় কাজের সাথে সাথে নিজেকে মানুষের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছেন। সন্ধ্যেবেলার ঝোড়ো হাওয়া তান্ডব করে গেছে। গাছের ডালপালা নেতিয়ে আছে। কারেন্ট নেই, পথের মাঝে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রিটলাইটগুলো। আবছা আলোয় কয়েক-পা এগোতেই আঠার মতন কিছু একটা জুতোর নিচে পড়লে ভ্রূক্ষেপ করলেন না নীলেশ। ডিভাইডারের গা ঘেঁষে বস্তার মতো কিছু একটা পড়ে আছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করতে নিলে বাস-স্ট্যান্ডের পাশ থেকে আসা আওয়াজে ঘাড় ঘোরান তিনি। -- বাবুজি! দফতর সে লওট রহে হ্যাঁয় ক্যাঁ? রাতের বেলা ভূকাচাঁদের গলার আওয়াজে বিস্মিত হন নীলেশ। ব্যাটা এই অন্ধকারে কি করছে! এমনিতেই বিকলাঙ্গ মানুষ, পুলিশের চোখে পড়লে অকারণে মার খাবে। -- অরে ভূকে, ইস অন্ধেরে মে তুম ক্যাঁ কর রহে হো! -- বলুন লেকে আয়া থা বাবুজি। অগর থোড়া বহুত ভি বি...

বহুরূপী

টিকটিকিটা বেশ অস্বাভাবিক রকমের। কালো ডোরাকাটা রঙ, আকারেও বড়, কিছুটা তক্ষকের মতো দেখতে। মন্ত্রীবাবুর আগাগোড়া মার্বেল পাথরের ঘরটিতে কোথা থেকে যে আজব সরীসৃপটা এলো, কে জানে! কাজের লোক ভোলা ঝাঁটা দিয়ে মেরে তাড়াতে গেলে বাঁধা দেন খোদ মন্ত্রীবাবু। যাযাবর প্রাণীরা বাসা বাঁধলে তাকে মেরে তাড়িয়ে দিতে হয় না। ছোটবেলায় মা বলতো, তাই আপাতদৃষ্টিতে অন্ধবিশ্বাস মনে হলেও মায়ের কথাটা মনে পড়ায় টিকটিকিটার প্রতি দরদ উথলে ওঠে মন্ত্রীবাবুর। মহানগরের বিশাল ওভার ব্রিজটি বানানোর মাস দুয়েকের মাথায় ভেঙে পড়লো, চাঙড়ের নিচে থেঁতলে গেলো কতগুলো নিরীহ মানুষ। দোষীদের চিহ্নিত করতে মন্ত্রীর সাহায্যপ্রার্থী হয়ে বাড়িতে এসেছিলেন সিবিআইয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। কমিশনের ব্যাপারটা চেপে গিয়ে অগ্নিশর্মা হয়ে যখন সব দোষ ঠিকাদার আর ইঞ্জিনিয়ারদের ঘাড়ে মন্ত্রীবাবু চাপিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন বিশাল ঘড়িখানার পাশে লেপ্টে থেকে 'ঠিক ঠিক' শব্দে তার কথায় সায় দিচ্ছিল শীতলশোণিত প্রাণীটা। কথার ফাঁকে কাঠের চেয়ারে তিনবার ঠক ঠক আওয়াজ করেন মন্ত্রীমশাই। কয়েক পেগ গলায় ঢালার পর সেদিন টালমাটাল অবস্থা। সারা রাত ধরে পার্টি হয়েছে। নির্বাচনে জয়...

*মহামারীর পদধ্বনি এবং একটি বিষধর*

* মহামারীর পদধ্বনি এবং একটি বিষধর * ।।তৃণময় সেন।।   ১ . বাপরে ! আরেকটু অইলে পায়ের তলে পড়লো নে।   কুচকুচে কালো বিষধরটা সুপারি গাছের তলায় ওঁৎ পেতে ছিল। নির্ঘাত ব্যাঙ বা ইঁদুরের গন্ধে এসেছে। মাত্র দু'হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যন্ত সাইকেলের পুরোনো টায়ার ভাবছিল নন্দু। গাটা শিরশির করে উঠলো। আলদ সাপে কাটলে নাকি চিকিৎসার সময়টুকুও পাওয়া যায় না! বিড়বিড় করে ক'খানা বিশুদ্ধ দেশীয় গালির সাথে একটু দূর থেকে আধলা ইঁট ছুঁড়ে মারলো সে। লেজের দিকটাতে গিয়ে পড়লেও চোখের নিমেষে নালার দিকটায় হারিয়ে গেল সাপটা। সাপ দেখে সহসা পায়ে লাগাম দেওয়ায় হাতে মগের জল অর্ধেকটা ছলকে পড়ে গেছে। একে পেট ভরে খাওয়া হয়নি, তার ওপর এই সাপের জ্বালা। কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনাটা মাথার মধ্যে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। “ইগু মানু তো বাইরা লাগের বা/কেউ পুলিশে খবর দেও/হরিয়া দাঁড়াও, না অইলে বাদে হকল মরবার…” নন্দুর কানে বাজছে ভিড়ের টুকরো সংলাপগুলো।   তরকারিতে নাড়িভুঁড়ি পোড়া ঝাল দিয়েছে মা। এক তরকারির খাওয়াতে ঝাল না দিলে সবার পোষাবে না , তাই বলে এত্তো ঝাল ! হাঁড়িতে কয়েক জাতের চাল একসাথে পড়ায়, কি...