#ভালোবাসি_ভালোবাসি
।।তৃণময় সেন।।
বদনাম সুনামের থেকে কয়েকগুণ দ্রুত ছড়ায়। আর আশ্চর্যজনকভাবে জনবসতি যত কম, ঘটনা লোকমুখে চার কান হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। নেট জমানায় যাকে বলে ভাইরাল। কে নতুন এলইডি টিভি কিনলো, কার মেয়ে প্রেম করছে, কোন বাড়িতে শাশুড়ি-বৌ একে অপরের ছায়া মাড়াচ্ছে না - এইসবের খবর রাখার ব্যাপারে গ্রাম, মফ:স্বল বা ছোট শহরের মানুষ বিশেষ দক্ষতা রাখেন। ম্যানেজারবাবু ও তার জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সারা জীবন গাধার খাটুনি খেটে গ্রামীণ ব্যাংকের সাধারণ কর্মচারী থেকে ম্যানেজার হয়ে অবসর নেওয়া অমলেশ ধরের কপালটাই খারাপ! কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেটার নিচে সারা জীবনের সঞ্চয় ঢালার আগে অন্তত একবার ভাবা উচিত ছিল ম্যানেজারবাবুর। পেনশনের উপরে লোন থেকে শুরু করে বাজার তেমাথার সাড়ে তিনকাঠা জমি যে ছেলের পড়ার জন্যই বিক্রি করছেন, সেটা পাড়াসুদ্ধ সবাই জানে। গেছিলেন তো ছেলের বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাটে, দু'মাস থেকে আবার তো ফিরে আসতেই হলো! বৌয়ের সাথে বুড়োবুড়ি নিশ্চয়ই অ্যাডজাস্ট করতে পারেননি!
আদতে আলাপের বিয়ে কবে হলো, আদৌ হয়েছে কিনা - সেটা কেউ জানে না। ফেসবুকে বেশ কয়েকটা ছবিতে মেয়েটাকে আলাপের সঙ্গে দেখে চাউর হয়ে গেছে যে এটাই তার বৌ। তারপর নানা মুখরোচক কেচ্ছাসহ ফেসবুক থেকে সোজা ছবিগুলোকে নামিয়ে বিতরণ হয়ে গেছে নানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। ছোট-মাঝারি জটলায় তিলকে তাল করে তালের পিঠে বানাতে কার্পণ্য করেননি শুভচিন্তকরা। যদিও ছেলের বিয়ে নিয়ে অমলেশ বা সুতপা কাউকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করার সাহস কারও হয়নি। মা-বাপ ওর জন্য এতো কিছু করলো অথচ ছেলেটা আজকে... নিজের রক্ত হলে কি আজকে আর এমনটা হতো? কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাসের সাথে একটা অদ্ভুত রকমের আত্মতৃপ্তি ঠোঁটের কোণে তির্যক হয়ে ওঠে পাড়ার লোকেদের।
আলাপের কাছ থেকে আসার মাসখানেক কেটে যাবার সাথে সাথে গলিতে-পাড়াতে ছেলের সাথে মা-বাপের সম্পর্কের রসায়নটা ধীরে ধীরে আলোচনার বিষয় হিসাবে গুরুত্ব লোপ পেতে শুরু করেছিল। এমতাবস্থায় ম্যানেজারবাবুর নিজের বাসস্থানকে বৃদ্ধাশ্রম বানানোর পরিকল্পনার ব্যাপারে জানাজানি হতেই এই ঘটনার কাছে বাকি ছোটখাটো বিষয়গুলো গৌণ হয়ে গেলো। কেউ বললো বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে, তো কেউ তার দুর্ভাগ্যের জন্য আফসোস করলো। সরকার গিন্নি তো এক গামলা তেল-মশলা সহকারে নিজের সাংবাদিক ভাইয়ের কাছে ঘটনাটা পরিবেশন করে তা খবরের কাগজে তোলার পরামর্শ দিলেন। আজকালকার ছেলেমেয়েরা শুধু নিজেদেরটাই বুঝতে শিখলো। যে মা-বাপ তাদের জন্য জীবন পাত করে গেলো, তাদের কোনো কদর নেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে কিছু আশা করাই বৃথা!
নিজেদের থাকার ঘর আর কিচেন বাদে বাকি ঘরগুলো ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। আলাপের পড়ার ঘর ছাড়া দক্ষিণ দিকের এই বিশাল ঘর এমনিতেই বিনা ব্যবহারে অনেকদিন থেকে পড়ে ছিল। দু'তলা ফাউন্ডেশনের এতো বড় একটা বিল্ডিং তুলতে গেলে এইটুকু ভাঙতেই হতো। শহর থেকে ইঞ্জিনিয়াররা এসে সব কিছু পরখ করে নকশা দিয়ে গেছেন। বারান্দার পাশেই বালু-পাথরের বিশাল ঢিবি। তার ডান পাশে লম্বা করে রডের গোছা রাখা হয়েছে। কালকেই সোজা ভাট্টা থেকে ইঁট আসবে। পাক্কা আড়াই বছর পর আবার কাগজ-কলম নিয়ে হিসাব রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ম্যানেজারবাবু। নাওয়া-খাওয়ার দিকে পর্যন্ত নজর নেই। অবসরের ক্লান্তিতে মনমরা হয়ে পড়ে থাকা মানুষটাকে আবার প্রাণবন্ত হতে দেখে ভালোই লাগছে সুতপার। অবসরের পর কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। সারাদিন বই পড়া আর রান্নাঘরে সুতপাকে সাহায্য করার নামে সবকিছু লন্ডভন্ড করা; সেটাও চলেছে মাত্র মাস-তিনেক। ছেলের ডাকে অবশেষে সাড়া দিতে হয়েছিল। নিজের দ্বিতীয়বার হলেও সুতপা প্রথমবারের মতো ফ্লাইটে বসেছিলেন।
সেভেনথ ফ্লোরের বিশাল ফ্ল্যাটে কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। তরিতরকারি থেকে শুরু করে তাজা মাছ সবই ঘরে এনে দিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে নারকলের নাড়ু, আমসত্ত্ব নিয়ে গেছিলেন সুতপা। সাধ ছিল অনেকদিন পরে ছেলেটাকে নিজের হাতে খাওয়াবেন। এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথেই ব্যাগ খুলে কিছুটা উদরস্থ করেছে আলাপ। কিন্তু বাড়ি ফেরার পরে তার ব্যস্ততা দেখে অবাক হয়েছেন তারা দুজনেই। নাওয়া-খাওয়ার পর্যন্ত সময় নেই। ভোরে, মাঝরাতে যখন তখন ল্যাপটপে হেডফোন লাগিয়ে বসে পড়ছে সে। দরজা বন্ধ থাকলেও মাঝ রাতের নিঃশব্দতায় কথা বলার আওয়াজ কানে আসে সুতপার। লাতিন আমেরিকা থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ড, আফ্রিকার ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকে নামকরা আইটি কোম্পানির সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আলাপন ধর। কিন্তু একটু ফাঁক পেলেই বসে মা-বাবার সাথে গল্প করতে বসে পড়ে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেও ফেরিওয়ালা নবীনকাকু, কাজ করতে আসা মনিপিসি থেকে শুরু করে বিসর্জনের বিকেলের স্মৃতিচারণ মায়ের কোলে মাথা রেখে করে যায় সে। চেষ্টা করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানোর। ইচ্ছে করে এই পৃথিবীতে যত সুখ- স্বাচ্ছন্দ্য আছে, সবটুকু ঢেলে দেয় তাদের পায়ে। কিন্তু জাগতিক বিষয়ের প্রতি কোনোদিনই মানুষ দুটোর তেমন কোনো আগ্রহ দেখেনি। জীবন থেকে তো কিছুই চান না তারা। নিজেদের সবটুকু দিয়ে তাকে মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন প্রতিনিয়ত। বড় শহরে বাড়ি-গাড়ি এইসব দিয়ে খুশি করতে চাইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই তাদের ছোট ছোট ভালোলাগাকে অনুসরণ করে চলে সে। সময় পেলে মাকে নিয়ে বাজার করতে বেরোয়। পুরানো চশমাটা একটা সুন্দর ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়। বাবার জন্য আমাজন থেকে প্রচুর বই অর্ডার করেছে। হেল্থ চেক-আপের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে শহরের নামিদামি ডাক্তারের। নিজের স্বল্প সময়ে যা কিছু করা যায় সবটুকুই করছে আলাপ।
সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও খোলামেলা জগতের বাসিন্দা অমলেশ-
সুতপা দিন পনেরোর বেশি এখানে টিকতে পারতেন না, যদি না সুহানির সাথে দেখা হতো। সবুজ রঙের শর্ট কুর্তি আর জিন্স পরা মেয়েটাকে দেখেই ভালো লেগেছিলো সুতপার। একটা প্রজেক্টের কাজে বাইরে যেতে না হলে আরও আগেই আসতো বলে জড়িয়ে ধরেছিলো সুতপাকে। সুহানি ইন্দোরের মেয়ে। লাস্ট সেমিস্টারে উঠে যখন বুঝতে পারলো সেটা তার জন্য নয়, তখন মায়ের একান্ত ইচ্ছায় নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ঠিকই লেগেছিল কিন্তু সেই পথ ধরে আর এগোয়নি সে। পেশাগত ক্ষেত্রে দুইজন দু'দিকে ছুটলেও আলাপের সাথে যোগযোগটা নিভে যায়নি। সাদা বন্ধুত্বের সীমানা ছাড়িয়ে আরও কয়েক পা এগিয়ে যাওয়া মানুষ দুটো কোনো নাম দিতে চায় না তাদের মাঝের এই সম্পর্কটাকে। নিজেদের ব্যক্তিগত পরিসরেই তাদের আনন্দ। বাড়ি থেকে ফেরার পথে ইন্দোরের বিখ্যাত সুইট ডিশ 'মাওয়া বাটি' নিয়ে এসেছে সে। নিজের হাতে খাইয়েছে অমলেশ-সুতপাকে। দু'দিন বাদে সকালবেলা গাড়ি নিয়ে এসে তাদের নিয়ে গেছে তার অফিসে। শহরের একটু বাইরে ছোট অফিসের বাইরে সাইনবোর্ডে লেখা আছে 'খিলতে চেহরে'। সমাজের দুঃস্থ মানুষদেরকে নানাভাবে সাহায্য করে তাদের এই এনজিও। বড় শহরের ফুটপাতে বসবাস করা বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদান করা তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। অনাথদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তারা করবে কিছু দিনের মধ্যে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে আরেকটা জায়গায় সুতপাদের নিয়ে গিয়েছিলো সুহানি। মেট্রো রেলের একটা শেডের নিচে চলছে পড়াশোনা। অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণরা স্বেচ্ছায় বিদ্যাদান করছেন। চল্লিশ-পঞ্চাশ জন নানা বয়সী শিক্ষার্থী পরম আগ্রহে তাকিয়ে আছে মাস্টারমশাইয়ের দিকে। দৃশ্যটি দেখে অভিভূত হয়েছিলেন তারা দুজনে। তারপরের দু'মাসে অন্তত দশবার সুহানির সাথে বেরিয়েছেন অমলেশরা। টিমের আরও তরুণ তুর্কিদের সাথে পরিচয় করিয়েছে সুহানি। 'খিলতে চেহরে'-কে কিছুটা আর্থিক সাহায্যও করেছেন অমলেশ।
মুখে কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলেও এইবার টেক্সাস থেকে ফেরার পথে সুহানির জন্য কিছু একটা সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে আসবে বলে স্থির করেছে আলাপ। সুহানি না হলে মা-বাবাকে এতোদিন কাছে রাখা যেত না। ছেলে দিন পনেরোর জন্য বিদেশ যাচ্ছে জেনে সুতপারাও আর থাকতে চাননি। আলাপের ফ্লাইটের দু'দিন আগেই বাড়ির পথ ধরেছেন। বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার পর জীবনটাকে আর গতবাঁধা একঘেয়েমিতে চালাতে রাজি ছিলেন না দুইজনই। দু'টো নবীন প্রাণের ছোঁয়ায় ভাবনারা ডানা মেলে উড়ছিল। ব্যাপারটার সূত্রপাত বেঙ্গালুরুতেই। কথায় কথায় জীবন সায়াহ্নে প্রবেশ করা মানুষ দুটোর মনের বারান্দায় নতুন সকালের খোঁজ দিয়েছিল সুহানি। বাড়ি ফেরার পর আক্ষরিক অর্থে ব্যাপারটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় যেমন ভাবা তেমন কাজ।
এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সবুজের আদরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো সুহানি। এত্তো সবুজ সে জীবনে দেখেনি। দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত, মায়াবী মেঘ, হাঁসের নিঃশব্দ সঞ্চরণ তার প্রাণটাকে ভরে দিচ্ছে অপার স্নিগ্ধতায়। এরকম একটা জায়গায় প্রথমবার এসেছে সে। নিজেই পৌঁছে যেতে পারবে বললেও গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অমলেশ। রেজিস্ট্রেশনের কাজ থেকে শুরু করে নানা ব্যাপারে গত কয়েকমাস লাগাতার কথা হয়েছে তার সুতপা-অমলেশের সঙ্গে। গিজার থেকে শুরু করে ঔষধ-পথ্যের যোগান রাখার মতো ছোট ছোট ব্যাপারে সুহানিকে জানিয়েছেন অমলেশ।
সাদা ঝকঝকে দোতলা বিল্ডিংটা অনেকদিন থেকেই পাড়ার প্রতিটা জটলার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। আজকে সকালে তার ললাটে পেইন্টাররা এসে নীল রঙ দিয়ে কিছু একটা লিখছে। মর্নিং ওয়াকের ছুতোয় আট-দশজন সকালবেলায়ই উঁকি দিয়ে গেছেন। বাকি সবকিছু সুহানির কথায় হলেও ব্যস্ততার মাঝে ফোনে নিজের ইচ্ছের কথাও জানিয়েছে আলাপ। মনিপিসিকে এখানে এনে রাখতে মাকে বলেছিল সে। যে মানুষটা স্নেহাদরে কোলে-কাঁখে করে বড় করেছেন, শেষ বয়সে তার অবহেলার জীবন বাঁচা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসেছেন অমলেশের ছোটবেলার বন্ধু নীলাম্বর। নাহ, ছেলেদের পরিবারে তার কোনো অযত্ন ছিল না। ছিল শুধু অব্যক্ত একাকিত্ব। স্ত্রী মারা যাওয়ায় পর মন লাগছিল না কিছুতেই। ওদিকে সুতপার ডাকে চলে এসেছেন তার পিসিমা। বয়স সত্তরের কাছাকাছি হলেও সিনিয়র নার্স হয়ে অবসরে যাওয়া এই মহিলার গা ও মনে এখনও যথেষ্ট জোর আছে। ছোটোখাটো অসুস্থতায় নিজেই দেখভাল করতে পারবেন বাকিদের। এক-এক করে সংখ্যাটা আজকে দশে এসে দাঁড়িয়েছে।
এখানে কারও থাকার ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্গতি-অসঙ্গতিকে মানদণ্ডের পাল্লায় রাখা হয়নি। আপাতত যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের দেখাশোনার সম্পূর্ণ ভার নেবে এই বৃদ্ধাশ্রম। এইক্ষেত্রে আলাপই অমলেশদের ভরসা। যদিও ইতিমধ্যেই বেশ বড় অঙ্কের আর্থিক সাহায্য সে করেছে। মা-বাবার এই উদ্যোগে সেই সবচেয়ে বেশি আনন্দিত। সুহানিকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই তার কাছে। যদিও আজকের এই দিনে আসতে পারবে না বলেই জানিয়েছিল। কিন্তু গাড়ির দরজা খোলার পর আনন্দাশ্রু দু’চোখ বেয়ে নামছিল সুতপার। মা-বাবার পর বাম পাশের নতুন বিল্ডিংয়ের দিকে চোখ যায় তার। "ভালো - বাসা : অ্যান ওল্ড এজ হোম"। নীল রঙের এই নামের জুড়িদার হতে নিজেকেও এই রঙে আজ সাজিয়েছে আকাশ। উঠোন জুড়ে মানুষের ভিড়। যারা এতোদিন থেকে সমালোচনা করেছেন, তারাও আজকে এসেছেন। ফিতা কেটে উদ্বোধন করতে কাঁচিটা আলাপের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলাপ তা ধরিয়ে দিতে চায় সুহানিকে। মা-বাবার সাথে দাঁড়ানো সুহানি ইতঃস্তত করলে তার কাঁধে হাতে রাখেন সুতপা। মেয়েটার হাতে নেই শাঁখা, কপালে নেই সিঁদুর, গায়ে খয়েরি রঙের সুতির সালোয়ার। এতবড়ো একটা দিনে একি পোশাকের ছিরি! অনেকেরই চোখ এড়ায়নি। কিন্তু আজকে আর কানাঘুষো করার সাহস হচ্ছে না। এইসব বললে কে কি ভাববে, চুপ থাকাই শ্রেয়! ফিতা কাটার সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে মুখরিত হয় উঠোন। কালোজাম গাছের পাতার ফাঁকে বসে থাকা দুটো টিয়া পাখি ফুড়ুৎ করে উড়ে যায় আকাশে। দূরে কোথাও গান বাজে...
ভালোবাসি, ভালোবাসি--
এই সুরে কাছে দূরে
জলে স্থলে বাজায় বাঁশি॥
ভালোবাসি, ভালোবাসি...
Comments
Post a Comment