চুপকথারা
'ব্যস্ততা' নামক শব্দটি আমাদের সবার জীবনে থাকলেও আমার মতো মানুষের কাছে সেই ব্যস্ততা কোনো ময়ালের পাশ থেকে কম নয়। আষ্টেপৃষ্টে পেঁচিয়ে রেখেছে। কথাটাকে অতিশয়োক্তি বলে ধরে নিতেই পারেন। কেননা কবি তো কবেই বলে গেছেন..."নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ,ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।" নিজের ক্ষেত্রে সবকিছুই বড্ড অতিরিক্ত ঠেকে আমাদের কাছে। কিন্তু মাফ করবেন, তার পরেও নিজের কথা থেকে একচুলও সরতে রাজি নই আমি। লেখাটা পড়ার সময় কথাগুলো আপনার নিজের ভেবে পড়ে নিলে কোনো অসুবিধা হবে না হয়তো।
কখনো মনে হয় এতো লম্বা এই জীবন বাঁচতে গিয়ে ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। আহার-নিদ্রা-মৈথুনের নাম তো জীবন নয় আমার কাছে। জীবন তো সেই মুহূর্তগুলো, যার জন্য বারবার বাঁচতে ইচ্ছে করে। মুহূর্ত কেটে যাওয়াটা আকাশ থেকে মায়াবী মেঘ ঝরে পড়ার মতোই। তারপর তো আবার আলোছায়ার গতানুগতিক জীবন। সেই রেশটুকু প্রকৃতির নিয়মে শেষ হয়ে গেলে একঘেয়েমি দুঃসহ হয়ে ওঠে একসময়। রোজনামচার সাধারণ বিষয়গুলো তখন জটিল হয়ে ধরা দেয়। ভাষায় ব্যক্ত করার মতো কিছু থাকে না, অথচ সয়ে যাওয়াটাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই কখনো মনে হয় প্রথম সাইকেল কেনা, ম্যাচের শেষ বলে ছয়, ভিড়ের মধ্যে প্রথমবার প্রেমিকার হাত স্পর্শ করার মতো মুহূর্তগুলোর শেষে জীবনটা তো থেমে গেলেও পারতো।
যাই হোক, গতানুগতিকতার ঘেরাটোপেই আমরা সবাই বন্দি থাকি। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও নিজের মতো করে মুক্তির পথ খুঁজি। সেই অজগরের বেষ্টনে দমবন্ধ অবস্থায় হাতড়াতে গেলে আমার হাতে কলম আসে। আবার কলম হাতে নেওয়াটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা বিলাসিতার মতো। একবার কলম হাতে নিতে গেলে অনেককিছুই উপেক্ষা করে যেতে হয়। আর সেই ছেড়ে দেওয়া জিনিসগুলো সময়-সুযোগ বুঝে আবার চড়াও হলে, তার ফলভোগ করার জন্য হাসিমুখেই প্রস্তুত থাকি আমি। একবার কলম হাতে নেবার আত্মতৃপ্তি অন্তত কিছুক্ষণের জন্য সকল পরিণতি ভোগ করতে নিজেকে অজান্তেই তৈরী রাখে। এই লেখাটাও এমন একটা পরিস্থিতির ফসল।
মনমরা, বিষণ্ণতা বা গোদা ইংরেজিতে ডিপ্রেশনের কবলে কোনোদিনই পড়িনি, এমনটা হয়তো আমরা কেউই দাবি করতে পারবো না। অনেক ক্ষেত্রে মন খারাপের একটা কারণ থাকে। কিন্তু বেশি কষ্ট তখন হয়, যখন সেই বিষণ্ণতার ঠিক কারণটা নিজের কাছেই অস্পষ্ট থেকে যায়। বিষণ্ণতার মতো প্রসন্নতাও মনের একটা ভাব। সেও অনেক সময় নির্দিষ্ট উপলক্ষ্য ছাড়া আসে। 'দোলে মন দোলে অকারণ' যদি হতে পারে, তবে 'কিছুতে কেন যে মন লাগে না'-টাও বাস্তব। ঠিক কোন কারণে হতোদ্যম হয়ে বসে আছি, সেটা না বলতে পারা বেয়াড়া মুহূর্তগুলো মাঝেমাঝেই ঘুরে ফিরে আমার ঘরে আসে। এই যেমন আজকে এসেছে। তাই তো কলম হাতে নেওয়া, লেখার নাম করে ভাট বকা, আর আধঘন্টা ধরে মন ভালো রাখার রসদ খুঁজতে গিয়ে প্রায় দশখানা ই-মেইল ইতিমধ্যেই ইনবক্সে এসে আমাকে চোখ রাঙাচ্ছে।
Comments
Post a Comment