একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক গল্প
।।তৃণময় সেন।।
দূরে একদল লোক দেখে থমকে গেলো দুঃখু। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মাঠে কোদাল চালাচ্ছিল। তার মাথায় কাঁচাপাকা চুল, অসংখ্য ছিদ্রে ভরা জামা, কোমরে লাল গামছা, ফেঁটে যাওয়া গোড়ালিতে রক্ত শুকিয়ে গেছে। পড়ন্ত বয়সে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেলেও দূরের ছায়ামূর্তিগুলো ঠিক আন্দাজ করতে পারছে সে। লোকগুলো কি তার দিকে এগিয়ে আসছে! কিন্তু কেন? তার কাছে তো কেউ কোনওদিন আসে না। তামাটে শরীরটা ঘেমে গেলেও কান-মাথা এবার ঝিমঝিম করতে লাগলো। যখন ট্রাঙ্ক ঝেড়ে সব কাগজপত্র বের করে দিনের পর দিন শহরে ছুটতে হয়েছিল, গত বছরের বন্যা যখন সাধের সবুজটাকে ধুয়ে নিয়ে গেলো; হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার দরুন প্রসব ব্যথা নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে মেয়েটার মারা যাওয়া বা প্রায় সারাটা বছর নুন-পান্তা বা খালি পেটে রাত কাটানোর সময় তো কেউ আসেনি তার কাছে।
তাহলে এরা কারা? ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে লোকগুলো দাঁড়াতেই আতঙ্কে আঁতকে উঠলো সে। মানুষগুলোর কি গায়ে কিছুই নেই! সম্পূর্ণ নগ্ন? ততক্ষণে ভিড়ের বুক চিরে, ধুলো উড়িয়ে ব্রেক কষলো ঝাঁ-চকচকে সাদা গাড়ি। কোনো একজন দরজা খুলে দিলে যিনি নামলেন, তার সোনালী চুল, স্ফীত উদর, চোখে রোদ চশমা, গলায় মোটা চেন সবই তো আছে কিন্তু কাপড় কোথায় গেলো! হাত তুলে শূন্য পানে নাচালেন তিনি। কিন্তু কাদের উদ্দেশ্যে? এই ফাঁকা মাঠে, তপ্ত দুপুরে সে ছাড়া তো কেউ নেই। বিশাল দেহের লোকটি দলবল সহ ধীর পায়ে প্রেতের মতো তার দিকে এগোতে লাগলো। বড় বীভৎস সেই দৃশ্য। কারোর গায়ে এক টুকরো কাপড় অবধি নেই। কিন্তু এতে ভ্রূক্ষেপ নেই লোকগুলোর। এরা কি কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না! মাত্র কয়েক হাত দূর থেকেই দেঁতো হাসির ফাঁকে এদের মূলার মতো বড় বড় দাঁতগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কোদাল ছেড়ে এবার প্রাণপণে দৌঁড়াতে লাগলো সে। এদের ঠিক চিনে গেছে দুঃখু। বাঁচতে হবে এদের কাছ থেকে। মাথা বনবন করে ঘুরছে। পা থেকে টপটপ করে ঝরে পড়া রক্তে ভিজে যাচ্ছে তেপান্তরের মাঠ।
Comments
Post a Comment