শেষ চিঠি

 #শেষ_চিঠি

-- বলুন, কী নাম আপনার! চুপ করে থেকে লাভ নেই, বরং বেশিই বিপদে পড়বেন।
নির্ভীক চোখজোড়া দেখে হয়তো সেদিন কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলেন করিমগঞ্জ রেল স্টেশনের ওসি। মেয়েলোক দুজন যে বাংলাদেশী, সেটা তার অভিজ্ঞ নজরে প্রথম বারেই ধরা পড়েছিল। একজন মাঝবয়সী তো আরেকজনের বয়স আঠারো-ঊনিশের কোঠায় হবে। যুবতী মেয়েকে যতটা সম্ভব আড়াল করে কঠিন পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রৌঢ়া। কিছুক্ষণ জেরা করার পরে ওসি সাহেব জানতে পারলেন এই মহিলা তার অতি পরিচিত জনের দিদি। অসুস্থ বাবাকে দেখতে চোরাই পথে বাংলাদেশ থেকে কৈলাসহর হয়ে এখানে পৌঁছেছেন। কায়স্থগ্রামে বোনের বাড়িতে একদিন ছিলেন। ওখান থেকে কাছাড় জেলার সোনাপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে যাবার পথে পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তাকে থানায় নিয়ে আসে।
আমার জ্যাঠামশয়, তাপস (বিশু) সেনের নাম শুনে সেদিন ছোট পিসিমণিকে যেতে দিয়েছিলেন সেই ওসি মহাশয়। অসুস্থ বাবাকে দেখতে সেটাই তার শেষ আসা। অদম্য সাহসের অধিকারীনি না হলে নিজের যুবতী মেয়েকে সাথে করে এভাবে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যে কেউ আসবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। পিসির কথা মনে পড়লে একটা আবছা ছবি চোখে ভাসে। একান্নবর্তী পরিবারের রান্নাঘরের একপাশে একটা তক্তপোষে জেঠতুতো দিদি আর আমাকে টুনটুনি পাখির গল্প শোনাচ্ছেন পিসিমণি। পাখির পাছায় বরইর (কুল) কাঁটা ফোটার গল্প শুনে আমরা দুটোতে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছি। তার বেশি আর কিছুই মনে নেই।
নিজেদের ব্যস্ততা সামলে যাব-যাচ্ছিতে বাবা-কাকাদের অনেক বছর কেটে গেছে, কিন্তু যাওয়া হয়নি পিসির কাছে। বছর দুয়েক আগে তার মারা যাবার খবর আসে। তাঁর স্মৃতি বলতে এতোদিন টুনটুনি পাখির গল্পটিই ছিল একমাত্র সম্বল। মা গতকাল পিসির লেখা এই শেষ চিঠিটা বের করে দেওয়ায় আরেকটু সমৃদ্ধ হলাম।

Comments

Popular posts from this blog

তবু আগমনী বাজে..

#সর্বভুক

শারদ সুজন