চুপকথা
।।তৃণময় সেন।।
কাঁচাপাঁকা চুল, রুক্ষ চেহারা, সস্তা ফ্রেমের ওপারের চেনা মানুষটিকে নিজের মতো করে খুঁজে নিয়েছিল অতসী। উদাস দু'চোখের সামনে মুখের লালিমা ও দু'কানের ঈষদুষ্ণতা ঠিক টের পাচ্ছিল সে। সারাটা জীবন এক ছাদের তলায় কাটালে এমন অনুভূতিটা কি হতো! সহসা বৃষ্টিতে সবুজ ফিরে পাওয়া মনটাকে বয়সের লাল কার্ড দেখিয়ে দমিয়ে দিলো সে। তাকে চিনতে পারেননি সৌমাভ। পরিচয় পেয়ে কয়েক সেকেন্ড দু'চোখের পাতা পড়েনি। ক্যান্টিন, ল্যাব, সহপাঠীদের কথার শেষে সরস্বতী পুজোর সেই বিকেলের প্রসঙ্গ উঠতেই ছোট্ট কেবিন আবার ডুবে গেলো নিস্তব্ধতায়।
-- হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার দৌঁড়ঝাঁপ করতে লেগে যেও না। তোমার বিশ্রামের দরকার।
নীরবতা ভেঙে কথাটুকু বলে এবার উঠে দাঁড়ালো অতসী। ডিসচার্জের কাগজে খসখসে কলমে সই করে গটগট করে বেরিয়ে গেলো কেবিন ছেড়ে। এই ক'টা দিন মনের মতো করে সেবা-যত্ন করেছে। আজ সকালবেলা নিজের হাতে ফুলকো রুটি, বেগুন ভাজা বানিয়ে খাইয়েছে প্রিয় মানুষটাকে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এভাবে যে দেখা হয়ে যাবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি সৌমাভ। আর বোধহয় দেখা হবে না। ইচ্ছে করেই মোবাইল নম্বরটা আদান-প্রদান হয়নি।
এরকমই একটা ক্ষীণ আলোর বিকেলে নিজে থেকে যোগাযোগ না রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা পরস্পরকে। এবারও কথার খেলাপ হয়নি। অতসীর হিলজুতোর শব্দ মৃদু হতে হতে হারিয়ে যায়। জানালার বাইরে সোনালী সন্ধ্যা নামে।
Comments
Post a Comment