একটা_নিষ্ঠুর_প্রেমের_গল্প
।।তৃণময় সেন।।
শরীর! শরীর! তোমার মন নাই....
তিনজন প্রেমী নিয়ে গতেবাঁধা জীবনটা এর আগে এতো দুঃসহ ঠেকেনি। শরীর সর্বস্ব জীবনে প্রেমের সংজ্ঞা শুধু একটা হেঁয়ালি বলে মনে হয়। দুমড়ে-মুচড়ে ছারখার করে দিতে চাইলেও, ওই তৃতীয় জনের হৃদয়ে কিছুটা হয়তো প্রেম বেঁচে ছিল। ক্লান্ত, অবসন্নকালে কোনো দেবদূতের মতো ভেজা পায়ে কাছে আসতো সে। আকণ্ঠ জলে তার নরম হাতের স্পর্শে অদ্ভুত শিরশিরানি অনুভূত হতো শরীর ও মন জুড়ে। সারাটা শরীর নিংড়ে, শুকিয়ে নিয়ে সুগন্ধ ভরা কুঠুরিতে সযত্নে ঘুম পাড়িয়ে দিতো সে। চোখ খোলার পর ওই প্রেমীটিকে কোনোদিনই দেখতে পাওয়া যায়নি। নিজেদের প্রয়োজনে ওই অত্যাচারীরা সুখনিদ্রা থেকে বার বার জাগিয়েছে। অভ্যাসগতভাবে জুলুম গা-সওয়া হয়ে গেছিলো, কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না আর। দিন নেই, রাত নেই.. অবলীলায় পড়ে থাকে শরীরের ওপর.. ছিঃ! ওদের ছোঁয়ায় এখন গা-ঘিনঘিন করে ওঠে। ওই প্রেমী এখন আর আসে না, এই দু’জন নিশ্চয়ই কোনো চক্রান্ত করে সরিয়ে দিয়েছে ওকে!
সামান্য কিছু নিয়ে খটাখট লেগেই আছে অভ্র-উর্মির মাঝে। লক ডাউনের দু’দিন আগে থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে রুনাদিকে। রান্না, ঘর মোছা, কাপড়-বাসনপত্র ধোওয়া কিছুরই অভ্যেস নেই কর্পোরেটে কাজ করা দুই বন্ধু ওরফে দম্পতির। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সাথে ঘরের যাবতীয় কাজ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ওরা। বিছানায় আধশোয়া হয়ে ক্লায়েন্ট কলে অনবরত বকবক করে যাচ্ছে অভ্র। একটু আস্তে বললেই তো হয়, দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে উর্মি। দেড় মাস হয়ে গেলো বিছানার চাদর বদল করা হয়নি। নিত্যদিনের ব্যবহারে এতোটাই নোংরা হয়ে গেছে যে আসল রঙ চেনা যাচ্ছে না।
কবে যে শেষ হবে এই লক ডাউন, প্রেমের নামে এই দুঃসহ যাতনা সহ্য হয় না আর। তিতিক্ষার চাতকের মতো দিন বদলের আশায় অভ্রের শরীরের নিচে পড়ে আছে বিছানার চাদরখানি। চাইলেই তো আর মরণ হয় না!
Comments
Post a Comment