যোদ্ধা
।।তৃণময় সেন।।
-- তর্ক করতে হইলে বাইরে য্যান, এইডা রাজনীতি করনের জায়গা না।
বহু দিনের অনিদ্রায় দুচোখে সূর্যাস্তের রক্তজবা রঙ, কামানো দাঁড়ি অথচ সাদাকালো জোড়া গোঁফ, হাত দুটো ঘিয়ে রঙের গ্লাভসে ঢাকা খসখসে আলখাল্লায় পেঁচানো গা, ডান পায়ের অস্থায়ী মোজা ফুঁড়ে দুটো আঙুল যেন কোনো সমবয়সী বন্ধুর মতো গা জড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে। যুদ্ধজয়ের কায়দায় বাম হাতে ওয়াইপার নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকলো সে। যাদের উদ্দেশ্যে বিরক্তি ভরা বাক্যবাণ নিক্ষেপ করলো, তারা অবহেলা মিশ্রিত ক্রোধের চোখে তাকে আপাদমস্তক ঝালিয়ে নিচ্ছে।
-- এত্তো সাহস! রবিদাস পাড়ার একটা লোকও আজ পর্যন্ত চোখ তুলে কথা বলার সাহস পায়নি। শালা পায়ের তলার চটি আজকে মাথায় উঠবে!!
উত্তপ্ত কথার ধ্বনি হাওয়ায় ভাসতেই কোমর অবধি লম্বা তৈলাক্ত লাঠি হাতে নিয়ে এগিয়ে আসলো সিকিউরিটি গার্ড। লাঠির ইশারায় সাদা গোলাকার বৃত্তে দাঁড় করিয়ে দিল প্রত্যেককে। নত মস্তকে আদেশ পালন করেন মৌলবী সাহেব। মোড়লবাবুও ততক্ষণে গলার গেরুয়া দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে দাঁড়িয়েছেন। আটত্রিশ দিন বাদে আজ হাসপাতালের ওপিডি খুলেছে। চেম্বার থেকে পথ পর্যন্ত লম্বা লাইন।
হাতের ওয়াইপারটা দাঁড় করিয়ে স্টোর রুমের নিরিবিলি বারান্দায় উবু হয়ে বসে সাতান্ন বছরের প্রৌঢ় রঞ্জন রবিদাস। চা-দোকানি ছোকরা শংকু এসে হাতে চায়ের ভাঁড় ধরিয়ে দেয়। সামান্য চাপ পড়ে এইবার ডান পায়ের চারটে আঙুল বেরিয়ে পড়েছে। কিটের গাড়ি আসলে পায়ের কভারটা আজকে বদলাতেই হবে।
Comments
Post a Comment