বর্ণমালা

বর্ণমালা
।।তৃণময় সেন।।
--ওহ্ শিট্!
দূর থেকে বাতি সবুজ দেখে হাই-স্পিডে এসেও কোনো লাভ হলনা ঈশিতার। মায়ের সাথে যাচ্ছে বলে খুশিতে সারা গাড়ি জুড়ে লাফালাফি করে যাচ্ছে ছোট্ট পিয়াল। তার আবোল-তাবোল যত কথা আর প্রশ্নবাণ অবিরত ছুড়ে দিচ্ছে মায়ের উদ্দেশ্যে। হাফ-ডে করে অফিস ফেরার পথে ইউ-কে-জি'র পিয়ালকে স্কুল থেকে তুলে নিয়েছে ঈশিতা। একদল ছাত্রের ভীড় বাতি লাল হয়ে যাওয়ার সদ্ব্যবহার করে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছে। পিছনে তাড়াতাড়ি পেরোনোর তাড়া দেওয়া লোকগুলো শিক্ষকই হবে! পুরু গ্লাসের ওপারে বাচ্চাদের বেশভূষা ছাড়াও হাতে কন্নড় ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ড দেখে ঈশিতা সিওর হয়ে গেছে যে স্কুলটি সরকারি স্কুলই হবে। নিজের বয়েসী বাচ্চাদের অবাক চোখে দেখে পিয়াল।
--মাম্মা, হু আর দে? হোয়্যার আর দে গোয়িং?
ব্যাঙ্গালোর থাকার এতো বছর হয়ে গেলেও গোলাকৃতি লেখাগুলোর মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারে না ঈশিতা। হঠাৎ ইংরেজিতে লেখা একটা প্ল্যাকার্ড চোখে পড়ে “The love for mother tongue makes a person complete in every sense. HAPPY INTERNATIONAL MOTHER LANGUAGE DAY"
-- টুডে ইজ মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে বেটা.. অ্যাণ্ড দে আর সেলিব্রেটিং দ্যা ডে।
একদৃষ্টে কয়েক সেকেন্ড ঈশিতার মুখের পানে চেয়ে থাকে পিয়াল... এরকম কিছু তো আগে কোনোদিন শুনেনি!
--হোয়াট ইজ মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে ..হোয়াই দে আর সেলিব্রেটিং..হোয়াই কান্ট্ উই সেলিব্রেট..হোয়াট ইজ মাই মাদার'স ল্যাঙ্গুয়েজ মাম্মা?
পিয়ালের শেষ প্রশ্নটি শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় ঈশিতা। তাড়াতাড়ি ফোনের ক্রোম ব্রাউজারে টাইপ করে "Bengali Alphabet Chart". একশো আশি সেকেন্ডের লালবাতির কাউন্টডাউন প্রায় শেষের দিকে। মাত্র সাতাশ সেকেন্ড বাকি আছে! ঈশিতার আঙ্গুল দ্রুত খুঁজে চলে বর্ণমালা।

Comments

Popular posts from this blog

তবু আগমনী বাজে..

#সর্বভুক

শারদ সুজন