বিড়াল

#বিড়াল

|| তৃণময় সেন||

 

-- আরআমাদিগের দশা দেখ-আহারাভাবে উদর কৃশঅস্থি পরিদৃশ্যমানলাঙ্গুল বিনতদাঁত বাহির হইয়াছে-জিহ্বা ঝুলিয়া পরিয়াছে-অবিরত আহারাভাবে ডাকিতেছি, ‘মেওমেওখাইতে পাই না!’- আমাদের কালো চামড়া দেখিয়া ঘৃণা করিও না!

প্রায় একশ্বাসে একাদশ শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবইয়ের প্রথম গদ্যবঙ্কিমচন্দ্রের "বিড়ালথেকে প্যারাগ্রাফটা শেষ করলেন যতীনবাবু।ফোর্থ বেঞ্চের কোণে দেয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে বসে স্যারকে দেখছিল সুকেশ প্যারাগ্রাফ শেষ করে কমলাকান্তের কাছে বিড়ালের বক্তব্য এবার শিক্ষার্থীদের বিশদে বোঝাচ্ছিলেন তিনি। স্যারের পাঠের ভঙ্গিতে হাসি পাচ্ছিল সুকেশের। অনেক চেষ্টার পর তা তা লুকোতে না পেরে হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠলো সে।

বহু বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যতীনবাবুর চোখ বইয়ের পাতাতে থাকলেও ক্লাসে এক-একজন ছাত্রের মন ক্লাসে আছে নাকি অন্য কোথাও বিচরণ করছেতা ঠিক ধরতে পারেন। সেকেন্ডের জন্য হলেও সুকেশের হাসি ওনার নজর এড়াতে পারেনি। দীর্ঘদেহী যতীনবাবু সুকেশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন -

-এই যে ছেলেদাঁড়াও তো দেখি।

সুকেশের নত মস্তক ধরা পড়ে যাওয়ার সূক্ষ্ম অপরাধবোধের জানান দিচ্ছিল। এভাবে না হাসলেই পারতোএখন অনুশোচনা  রাগ হচ্ছে ওপর। খুব গরিব হলেও পড়াশোনাতে এতোটাও অমনযোগী নয় সুকেশ। আর যেহেতু নিজের উপার্জনে এই পড়াশোনাতাই মনোযোগী হওয়াটাই স্বাভাবিক।

--বাড়ি কোথায় তোমারবাবার নাম কীসামান্য রেগে গিয়েই জিজ্ঞেস করলেন যতীনবাবু।

--স্যার আমার বাড়ি নীলছড়াবাবার নাম গোপেশ রায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাপা গলায় উত্তর দেয় সুকেশ। যতীনবাবুর কানে তা পৌঁছায় কি না বোঝা যায় না। হয়তো উত্তর জানায় তেমন আগ্রহী নন তিনি।

--এইবার বলোহাসছিলে কেন?

গমগম আওয়াজে ক্লাসরুম নিস্তব্ধ হয়।

কোনো উত্তর করে না সুকেশবাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডেস্কে খুঁটতে থাকে। পরিস্থিতি গম্ভীর হয়ে উঠেছে। সুকেশের কাছে উত্তর না পেয়ে স্যার এইবার আরও কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ক্লাসে সবাই মেরুদণ্ড সোজা করে একটু সিরিয়াস হয়ে বসে। উত্তর না পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জিজ্ঞেস করেন যতীনবাবু। তবে বিষয়টা এইবার মূল প্রশ্ন থেকে একটু অন্যদিকে গড়ায়।

 

--কেন হাসছিলে বলোএখানে হাসার কী আছেঠিক আছে বলতো দেখি এখানে বিড়াল কী বলতে চাইছেকিসের প্রতীক এই বিড়ালআমি এতোক্ষণ যা বুঝিয়েছিদেখিতো তোমার কানে কতটুকু গেছে!

সুকেশ নিরুত্তরযতীনবাবু আবার বললেন -

-- শুনতে পাচ্ছোআমি কী জিজ্ঞেস করছি?

ঢোক গিলে সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করে সুকেশ। মাথা তুলে এবার সামনে তাকায়।

--স্যার.. আমরাউ তো বিড়াল.. আপনে বিড়ালের ব্যাপারে যখন কইরাতখন মন অইলো যে আমিও তো অলা।

সুকেশের কথায় ক্লাসশুদ্ধ সবাই জোরে হেসে উঠলো। সুকেশ ছাড়া পুরো ক্লাসে কেউ এইরকম উত্তর দেবে নাএটা ওর সহপাঠীরা জানে। মাঝে মাঝে এরকম অস্বাভাবিক ব্যবহার করে সুকেশ। বেশ কয়েকবছর আগে সুপুরি গাছ থেকে পড়ার পর থেকে মাথায় ছিট ধরেছে ওর। রোদেপোড়া লিকলিকে চেহারাসামনের বড়বড় দাঁতদুটোর মাঝে অনেকটা ফাঁকাসজারুর কাঁটার মতো সোজা সোজা তেলচিটে চুলমাথার ডানপাশে একটা গভীর কাটা দাগ তার চারপাশটা টেকো মতো। সুকেশ দেখতে সবার থেকে কিছুটা আলাদা। সহপাঠীদের হাসির রোল থেমে গেলেও যতীনবাবু গম্ভীরমুখে চেয়ে রইলেন সুকেশের দিকে। রাগের বদলে এখন কিছুটা বিস্ময়মাখা চেহারা। ছেলেটা যা বললো তা কি সে সত্যিই ভেবে বলছে না নিছকই গুলতামিঢং করে ক্লাস শেষ হওয়ার ঘণ্টাধ্বনি পড়ে যাওয়ায় এই উত্তরের কারণটা জানা হলো না যতীনবাবুর।

 

ক্লাস শেষ হতেই শিরিষ গাছের নিচে দাঁড় করিয়ে রাখা সাইকেলে চড়ে স্কুলের ঢালু পথ দ্রুত নেমে যায় সুকেশ। তিনটা বাজবার আগে বাড়ি পৌঁছাতে হবে। কুদ্দুসচাচা রোজ ওকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেসে- পারে না। বাজারে যাবার আগে ডাল-আলু-পেঁয়াজের বস্তাতেলের টিনচুন-তামাকপাতাসাবানের গোল্লা ছাড়াও অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ভারী প্লাস্টিকের ত্রিপলরাতে বাজার থেকে ফেরার জন্য কেরোসিনভর্তি মশাল -- সবকিছু ঠেলাগাড়িতে লোড করতে হবে। তারপর হেঁটে-হেঁটে রওনা হবে বাজারের উদ্দেশ্যে। সপ্তাহে দুইদিন জারইলতলা বাজার আর একদিন করে বাবুরবাজার আর ভাঙ্গারপার বাজারে যায় ওরা। নির্দিষ্ট বেতন ছাড়াই প্রায় বছরখানেক হল কুদ্দুসচাচার সাগরেদ হয়েছে সুকেশ। প্রথম দু'মাস কাজ করার পরেপুরোনো সাইকেলটা কুদ্দুসই দিয়েছিল যাতে কাজের ফাঁকে পড়াশোনাও চলতে পারে। কখনও দেড়' তো কখনও দু'শো টাকা - এইভাবেই রোজ বাজার শেষে ওকে পারিশ্রমিক দেয় কুদ্দুসচাচা। গতমাসে ঈদের সময় নিজের ছানাপোনার সাথে সুকেশের জন্যেও একটা শার্ট কিনেছিল কুদ্দুস। আধপাগলা প্রতিবেশী ছেলেটার প্রতি সন্তানসম স্নেহ লালন করে সে।

 

সুকেশের বাবার পুরোনো কাপড়ের ব্যবসা। যা রোজগার হয় তার থেকে বেশি মদ গিলে বাড়ি ফিরে সে। বাপকে মোটেই সহ্য করতে পারে না সুকেশ। ছোট বোন সুমি ডায়রিয়াতে মারা যাবার জন্য আজও বাবা গোপেশকে দায়ী করে ও। যদিও তখন নিজে ছোট ছিলকিছু চোখে দেখেনিকিন্তু একটু বড় হওয়ার পর লোকমুখে শুনেছে যে ঐদিন সুমিকে নিয়ে হাসপাতালে যাবার নাম করে মেয়েকে কোলে নিয়েই হাসপাতালের একটু আগে বাঁশঝাড়ের নিচে বসে মদ খেতে লেগে গিয়েছিলো ওর বাপ। পরে হুশ ফিরে আসলে যখন মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছায়তখন আর সুমির দেহে প্রাণ ছিল না। ছোট্ট সুকেশের সেই দিনের স্মৃতি বলতে মায়ের বুকফাঁটা আর্তনাদ মনে আছে।  উঠোনে আছাড়িপিছাড়ি খেয়ে স্বামীকে অনর্গল শাপ-শাপান্ত করার সাথে মৃত্যূভিক্ষা চাইছিল করুনাময়ের প্রতি। মায়ের আঁচল ধরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে সে নিজেও ক্রমাগত কেঁদে যাচ্ছিল।

এতো বড় একটা ঘটনা ঘটার পরেও একফোঁটাও বদলায়নি গোপেশ। প্রতি বাজারবারে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার ফেরার পথে বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি সব মিলিয়ে একটা দুর্বোধ্য ভাষায় পুরো গ্রামবাসীর কাছে নিজের সুপ্ত প্রতিভার পরিবেশন করতে করতে বাড়ি ফেরে। আর সপ্তাহের বাকি দিনগুলোর সন্ধ্যাশেষে তো একটু আধটু আছেই। তাছাড়া ওদের পাশের পাড়ার এক মহিলার সাথে সম্পর্কের কথাও কানে এসেছে সুকেশের। ঐদিন তো কুদ্দুসচাচাই বলছিলো

--তোর বাপরে থোড়া দেখিশুনি রাখিছ রে বেটাতোর মা তো আব মরছইন না। ইতা জিনিস দেখতে বড় বুরা লাগে।

সুকেশের মায়ের ব্যাপারে এইরকম বলার কারণ আছে। সবাই জানে সুকেশের মা মারা যাওয়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বছর পেরিয়ে গেছে স্তন ক্যান্সারে শয্যাশায়ী শিবানী। নিজেও রোজ ভগবানের কাছে মুক্তির আশায় করজোড়ে প্রার্থনা করেতবুও তার আকুতি হয়তো সঠিক স্থানে পৌঁছায় না। স্থানীয় চিকিৎসার অনেকদিন পর যখন ক্যান্সার হাসপাতালে প্রথমবার গিয়েছিলতখনই হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দিয়েছিল যে অনেক দেরি হয়ে গেছে আসতে। ব্যথা-কষ্টের উপশমে কিছু ঔষধপত্রাদি চালিয়ে যেতে বলেছিল সুকেশদের। মায়ের জোরাজোরিতে যদিও মাধ্যমিকের পুরো একবছর পর আবার স্কুলে গিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে সুকেশকিন্তু আর ভালো লাগছে না ওর। আজকাল বিকেলে ফেরার পর ওর বাবা প্রায়ই মাকে যা তা কথা শোনায়নিজে ঔষধ আনে তো না'সুকেশকেও ঔষধের জন্য কোনো টাকা-পয়সা দেয় না। এই বছর পরীক্ষাটার পরে রেজাল্ট যাই আসুক না কেনআর স্কুলে না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুকেশ। রোজগারের ওই টাকাটার প্রয়োজন ঘরে অনেক বেশি। এই মানুষরূপী জীবনে ওর মতো বিড়ালদের কাছে পড়াশোনাটা তো বিলাসিতা মাত্র...

রোজ সকালে উঠে পুকুরপাড়ে সব্জিবাগানে গিয়ে একটু দেখাশোনা করে মায়ের সামনে বই নিয়ে আধঘন্টা মতো বসে সুকেশ। স্কুলে কী পড়াশোনা হয়েছেসব মাকে শোনায়। বলে -

-- জাননি মাআমরা বইত এক মেকুরর গল্প আছে। আমরার থাকিও কষ্টর জীবন বেচারারকেউ কুন্তা খাইবার দেয় না.. হাড্ডি বারহইগেসে...

 

আধপাগলা ছেলের কথায় বুকভরে অক্সিজেন নেয় শিবানীমলিন মুখে হাসি ফুটে ওঠে। মরে গেলে ছেলেটার কি হবে ভেবে উদাস হয় সে। আরও পাঁচটা ছেলে থেকে  আলাদা। কখন কী বলে বসেকরে বসে ঈশ্বরই জানেন। আবার বাপের মতো হয়নি ভেবে স্বস্তি পায় মনে। সহজিয়া মনের আউল ছেলেটিকে লোকে ভালবাসে। সে না থাকলেওডালভাতের ব্যবস্থা ওকে ঈশ্বরই করে দেবেন।

 

আজকে মঙ্গলবারবাড়ির পাশে জারইলতলা বাজারে যেতে হবে বলে ততটা চাপ ছিল নাকিন্তু দুপুরবেলা থেকেই ভাদ্রমাসের গুমোট গরম অসহ্য হয়ে উঠেছে। বিকেলদিকে বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা দেখে সুকেশরা সব ব্যবস্থা করেই এসেছে বাজারে। বাঁশের চোঙার ভিতরে কেরোসিন ঢেলে ভাল করে একটা মশাল বানিয়েছে সুকেশ। বাজারে পৌঁছে নতুন আলু-পেঁয়াজের বস্তা কাঁচি দিয়ে কেটে তৈরি করে দেয় কুদ্দুসকে। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা থাকায় ত্রিপলটার চারপাশে নারকেলের রশি দিয়ে দোকানের উপরে বেঁধে দিয়েছে সুকেশ। পুরোনো গ্রাহকদের সাথে সাথে কুদ্দুসের নতুন গ্রাহকরাও এখন সুকেশকে চেনে। গ্রাহকরা লিস্ট হাতে ধরিয়ে চলে গেলে সুকেশ একটা একটা করে সব জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে রাখে। আজকে বাজারে আসার পর একজন লোকের কাছ থেকে পঁচিশ কিলো লোকাল টোম্যাটো কিনে রেখেছে কুদ্দুস। সেগুলো বাছতেই আজ অনেকক্ষণ চলে যায় সুকেশের। বাজার প্রায় শেষের দিকেমাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ চমকানোয় পশ্চিমাকাশে গাঢ় ধূসর রঙের জমা মেঘ পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কুদ্দুস বলে

--আস্তে আস্তে হকলতা গুছা রেবা সুকেশমেঘ অইবো লাগের...

তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে একটা কান্ড করে বসে সুকেশ। ওদের দোকানের পাশে বসে মাছবিক্রেতা জামালের একটা বাক্স অজান্তে ঠেলাগাড়িতে চড়িয়ে নেয়। জামালও তখন সব জিনিসপত্র গোছাচ্ছিল। সব কিছু গুছিয়ে নেবার পর কিছু একটা কম মনে হচ্ছিল জামালের। হঠাৎ পাশের ঠেলাগাড়িতে নিজের সাদা রঙের বাক্সটা দেখে তেড়ে আসে সুকেশের দিকে। সবকিছু নিয়ে একটু বেশি হুঁশিয়ারি দেখায় বলে সুকেশকে এমনিতেও খুব একটা পছন্দ করে না জামাল। পিছন থেকে সজোরে সুকেশকে ধাক্কা দিয়ে বলে

--কিতারে হালার হালার উলাআমার মাছ ইগুইন তোর ঠেলাত কেমতে আইলোচুর কিগু কানর...

নিজেকে চোর বলায় মাথা গরম হয়ে ওঠে সুকেশের। ভুল করে যে জামালের বাক্স ঠেলায় উঠিয়ে নিয়েছে,সেটা একবারের জন্যও মাথায় আসে নাউল্টে চড়াও হয় জামালের প্রতি। জামার কলার ধরে ফেলে জামালের। পরিস্থিতি বিগড়াতেই জামাল সঙ্গী-সাথী নিয়ে তিন চারটে লাথি-ঘুসি বসিয়ে দেয় সুকেশকে। কুদ্দুস সহ কয়েকজন মধ্যস্থতা না করলে সুকেশের কপালে যে আরও দুঃখ ছিল সেটা তার ছেঁড়া শার্ট আর ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখে ঠাহর করা যায়।  

--তুমার পাগলা ইগুরে সামলাইয়া রাখিও বা চাচাবলে সতর্কবাণী দিয়ে নিজের পথ ধরে জামাল।


মাথা ঠান্ডা হলে পরে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি অভিমুখে তাড়াতাড়ি পা চালায় সুকেশরা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছেবাঁশপাতার শোঁ শোঁ আওয়াজ জানান দিচ্ছে হাওয়ার তীব্রতার। জামালের একটা ঘুসি থুতনিতে পড়ায় ঠোঁটের নিচের দিকটা ফেটে গেছে সুকেশেরচুলভেজা জল নাক বেয়ে মুখে গেলে তার সাথে সাথে রক্তের নোনতা স্বাদও টের পাচ্ছে সুকেশ। আর আধা কিলোমিটার হাঁটলেই বাড়ি পৌঁছে যাবে ওরা। মেঘে ঢাকা আকাশে সন্ধ্যা আজ বেশ অন্ধকাররাত বলে ভ্রম হয়। হাওয়ায় তান্ডবে মশালটা নিভুনিভু। ঠেলাগাড়ির হাতলে দু-হাত রেখে প্রাণপণে দৌঁড়ে চলে পা দু-জোড়া। বেশি ভিজে গেলে ডালমশলাজাতীয় জিনিস নষ্ট হয়ে যাবে। সুকেশের বাড়ির পরে আরও চার-পাঁচটা বাড়ি পার হলে কুদ্দুসের বাড়ি। তাই প্রথমে কুদ্দুসচাচাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজে বাড়ি ফিরবে সুকেশ। কিন্তু নিজের বাড়ির সামনে যেতেই কয়েকটা টর্চ আর কেরোসিন বাতির আলো দেখতে পায় সুকেশ। ঠেলাগাড়ি একটু ধীরে করতেই কে একজন যেন ডেকে ওঠে...."সুকেশ নি রে.. জলদি আয় বেটা" মনের মধ্যে কেমন জানি একটা অশনি সংকেত পেয়ে ঠেলাগাড়ির হাতল ছেড়ে দৌঁড়ে চলে যায় সুকেশ। বারান্দায় কয়েকজন মহিলা জটপাকিয়ে বসে আছেসুকেশকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ায়। ঘরের ভিতরে তক্তপোষে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে ওর মাঘাড়টা একপাশে হেলে গেছে। মায়ের একটা হাত ধরে বিছানায় বসে পড়ে সুকেশহাতটা ওর ভেজা হাত থেকেও ঠাণ্ডা। ধীরপায়ে ঘরে ঢুকে ওকে সবকিছু শোনায় সুবোধ জ্যাঠা। পাশের পাড়ার ওই মহিলাটাকে সন্ধ্যা থেকে খুঁজে পাওয়া যাছিল না বলে মহিলার ভাই সদলবলে হাতে লাঠি-দা নিয়ে ওর বাপ গোপেশকে নাকি খুঁজতে এসেছিল। গোপেশকে তো পায়নিকিন্তু তালাবন্ধ ঘরের জানালা ভেঙে ঢুকে ওদের ঘরে ঢুকে পড়ে। ওরা চলে গেলে মাকে এই অবস্থায় ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গোপেশ এখনও বেপাত্তা। পুলিশ আউটপোষ্টে খবর দিতে দুইজনকে সাইকেলে পাঠানো হয়েছিলকিন্তু ওরা এখনও ফিরে আসেনি। বাইরে ততক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছেসুকেশ মায়ের হাত ধরে বসে দুর্যোগ থামার অপেক্ষা করতে থাকে।

Comments

Popular posts from this blog

তবু আগমনী বাজে..

#সর্বভুক

শারদ সুজন