স্বাধীনতা দিবস ও কিছু বোবা ফুল

 স্বাধীনতা দিবস ও কিছু বোবা ফুল

।।তৃণময় সেন।।
নিস্তব্ধ পথঘাট। পাখির কলকাকলিতে শহরের বুকে ভোরের সপ্রতিভ স্নিগ্ধতা সুবাস ছড়াচ্ছে। পূব-আকাশ রংপেন্সিলের লালিমা মেখে হয়ে উঠেছে শিশুর মতোই পবিত্র। অথচ ঘন্টাখানেক আগেই টিনের চালে টুপটাপ আওয়াজে বাজছিল মনখারাপের সুর। মেঘে ঢাকা আকাশের বিষণ্ণতা ভেদ করে আলো ফোটা মাত্রই ছাতাটা গলায় বেঁধে বাঁশের সাজি নিয়ে ফুলবাগানে ঢুকেছিল ঝুনু। গাঁদা-ধুতুরা-জবা-অপরাজিতা-টগর-পদ্ম মেঘের প্রেমবাণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আকাশের আদরে ময়ূর পেখমের মতো নিজেদের সৌন্দর্যের ডালি উন্মুক্ত করে ধরেছে পদ্ম-জবা-টগরেরা। ধূসর প্রেমে তারা সিক্ত করে নিচ্ছে হৃদয়টাকে।
একহাতে ছাতা নিয়ে সাইকেলে প্রায় চার কিলোমিটারের রাস্তা পেরোনো সহজ কাজ নয়। বৃষ্টির বেগ বেশি হলে ভিজে একসা হয়ে ছেলেটা বাড়ি ফিরবে। তারপর যদি জ্বর-সর্দি আসে! সময়টা তো বড্ড খারাপ! এসব আবোলতাবোল ভাবনা মিছেমিছিই ভিড় করছিল মণিমালার মনে। ঝুনু বেরোনোর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই প্রথমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থামলো, তারপর ধূসর আকাশে স্থান করে নিলো নীল-সাদার সামিয়ানা। মৃদুমন্দ হাওয়ায় পাতার বুকে জমা জল এখনো টুপটাপ ঝরছে। দু’ফোঁটা পড়লে পুরো মাথাটাই বুঝি ভিজে যাবে। শক্ত ঝাড়ুর খোঁচায় কাদায় লেপ্টে থাকা তামাটে কাঁঠালপাতা জড়ো করে মণিমালা। স্নান সেরে তাড়াতাড়ি মন্দিরে যেতে হবে। ছেলে রোজকার মতো কয়েকটা লাল-সাদা ফুল শিউলির ডালে ঝুলিয়ে রেখে গেছে।
এদিক-ওদিক দেখে মুখের মাস্ক খুলে বুক ভরে অক্সিজেন নেয় ঝুনু। সাইকেলের হ্যান্ডেল ছেড়ে কয়েক সেকেন্ড আধবোজা চোখে পাখির মতো দু'হাত ছড়িয়ে হাওয়ায় ভাসে। সোজা পথে দূরের ট্রাকটা খেলনা গাড়ির মতো নজরে আসার পরে প্রজাপতি মনটাকে সে একটু বাগে আনে। কৈশোর ছেড়ে যৌবনে পা দেওয়া ঝুনুর মুখে হালকা গোঁফ-দাড়ি ক্রমশ কাজল মাখছে। মায়াভরা দু'চোখ, কপালঢাকা একমাথা চুল, হাসিমাখা মুখখানা দেখে একবারও মনে হয় না যে ছেলেটা বোবা।
হ্যান্ডেলে ধরা হাত দুটোর শিরা ফুলে উঠেছে। মাঝারি উচ্চতার ঝুনুর শরীরটা রোগা হলেও বেশ শক্তপোক্ত। মাঝে মাস দুয়েকের জন্য বন্ধ থাকলেও বছর পাঁচেক ধরে রোজ সকালবেলা চার-পাঁচ মাইল সাইকেল চালানোর অভ্যাসটা তাকে তরতাজা থাকতে সাহায্য করে। বোবা-কালা ঝুনুকে পেছন থেকে চিৎকার করে ডাকলে শুনতে পায় না অথচ বৃষ্টির রুমঝুম, গাড়ির হর্ন, ঢাকের বাদ্যি কেমন করে যে তার কানে আসে, তা মণিমালা ধরতে পারে না। শুরুর দিনগুলোতে ওভার ব্রিজ পেরিয়ে পথের ধারেই সে কয়েক ঘন্টা বসে থাকতো। বাপ কোথায় বসে ফুল বিক্রি করতো তা জানা ছিল না। একে তো তাকে কোনোদিনই শহরে নিয়ে আসেনি, তাছাড়া বসন্ত পঞ্চমীতে ভোরের নাম করে প্রায় শেষ রাতে সাজি ভর্তি ফুল নিয়ে বেরিয়ে ঝলক যখন গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেলো, তখনও ছেলেটাকে সাইকেল নিয়ে পথে বেরোতে দিতো না মণিমালা।
গ্রাহকের থেকে শহরের বেওয়ারিশ ষাঁড়, দুর্গন্ধে ভরা পাঁঠারা তার পসরা দেখে বেশি আকর্ষিত হতো। একটু অন্যমনস্ক হলে আমপাতা, বেলপাতা, গাঁদা ফুলের মালা - যা আয়ত্তে এসেছে তাতেই হামলে পড়েছে। হোম ডেলিভারির যুগে আজকাল আর পথে বসে না ঝুনু। সাত-আটজন স্থায়ী গ্রাহক আছে তার। বাড়ি গিয়ে ফুল পৌঁছে দিলে মাঝেমাঝে ভালো খাবারও জোটে। বিস্কুট-কেক-পিৎজা যা পায় তা না খেয়ে পকেট থেকে পলিথিনের ব্যাগ বার করে প্যাক করিয়ে নেয় সে। বোবা, শান্তশিষ্ট ছেলেটিকে সবাই ভালবাসলেও দত্ত গিন্নির অপত্য স্নেহের তুলনা যেন কারো সাথেই হয় না। ঝুনুকে রোজ ডেকে নিয়ে সোফায় বসান তিনি। অন্যদের মতো বাসি-উচ্ছিষ্ট খাবারের বদলে চিঁড়ের পোলাও, স্যান্ডউইচ, কফি আরও অনেক কিছু খাওয়ান। একমাত্র ছেলেটা বিদেশে থেকে পড়াশোনা করে। রাজনীতি বিশেষজ্ঞ স্বামীর কাছে সময় নেই। মূক ছেলেটার মুখের সরল হাসি তার মাতৃ হৃদয়কে মথিত করে। একটা সময় লাঠিওয়ালা দারোয়ান দেখে দত্ত ম্যানসনে ঢুকতে ভয় পেত ঝুনু। সে ভয় এখন কেটে গেছে। পেতলের সাজিতে ফুল রেখে নিজে সামনে দাঁড়িয়ে ভালো-মন্দ খাওয়ান দত্ত গিন্নি। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য টিফিন বাটিতে আবার প্যাক করেও দেন। বাড়ি ফিরে মায়ের টুকুতে আবার হাসিমুখে ভাগ বসায় ঝুনু।
সূর্যের চিকন আলো আদুরে ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলছে ভেজা পৃথিবীকে। গাছের পাতা, ঘুলঘুলির ফোকর দিয়ে চিকচিক করছে তার নবীন আঁচল। গলায় ঝোলানো মাস্ক এবার নাকে লাগায় ঝুনু। দু'টো বাড়ি ফুল দিয়ে দত্তদের অভিজাত গলিতে সাপের মতো বেঁকিয়ে ঢুকে পড়ে তার জংধরা সাইকেল। কিন্তু আজ গ্রিল বন্ধ কেন! দারোয়ানটাই বা কোথায়! আজ কতগুলো বছর থেকে সে দত্তবাড়িতে ফুল দিয়ে যাচ্ছে। কই, এরকমটা তো কখনো দেখেনি! ঘাড় উঁচিয়ে চেয়ে দেখলে টিপ পরা চেনা মুখখানা ঠিক দেখতে পায় সে। সবুজ কাপড়ে নাক-মুখ ঢাকা মুখখানা হাতের ইশারায় তাকে চলে যেতে বলছে। হতভম্ব হয়ে মিনিট দুয়েক কংক্রিটবাঁধা পথে দাঁড়িয়ে থাকে ঝুনু। ডান-বাঁ চোখ বুলালে পুলিশের জিপখানা চোখে পড়ে। কোনোমতে সাইকেলে চড়ে জোরে প্যাডেল মারতে থাকে সে। পিছন থেকে হাঁক পাড়ার শব্দ কিছুতেই তার কানে আসে না।
শহরতলীর শীতলা মায়ের মন্দির সকাল-সন্ধ্যে পরিচ্ছন্ন রাখা, সাপ্তাহিক পুজোর দিনে বাসনপত্র ধোয়া, নৈবেদ্য সাজানোর কাজ করে সপ্তাহ অন্তে তিনশো টাকা করে পায় মণিমালা। ঝলক চলে যাবার পরে এই সংসারে তার আপন বলতে ছেলে ঝুনু আর দু'টো বাচ্চা সহ একটা দাড়িওয়ালা ছাগল। রেশনের চাল, আটা, ফুল বিক্রির টাকায় দিব্যি চলছিল তার ছোট্ট সংসার। মহামারীর ছোবলে প্রথমে মন্দিরের বেতন তিনশো থেকে দু'শো হলো, মাস দুয়েক বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ হওয়ায় বাগানের কত ফুল অতিবৃষ্টিতে গলে-পচে ভেসে গেল। মাঝে কয়েকদিন আধপেটা হয়ে থাকলেও কারো কাছে হাত পাতেনি মা-ব্যাটা। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো, সপ্তাহ ফুরোলে সে দু'শো টাকাই পাচ্ছে; কিন্তু ফুলের ব্যবসাটা আগের থেকে কম হলেও খুব একটা যে মন্দ চলছে তা বলা যাবে না।
ফেরার পথে বেশ কিছুটা ফুল লোহার ব্রিজ থেকে জলে ভাসিয়ে দিলেও বাড়িতে ফিরে মাকে কিছু বলে না ঝুনু। আজকের অদ্ভুত ব্যাপারটা কোনোভাবেই মাথা থেকে বের করা যাচ্ছে না। পঞ্চাশ টাকার সাথে দশ-বিশ টাকার খুচরো নিয়ে বাড়ি ফিরলে বিশেষ কাজ ছাড়া মায়ের মুখোমুখি হয়নি সে। আগামীকাল স্বাধীনতা দিবস, ক্লাব-স্টেশন চত্বরে গাঁদা-টগর-গোলাপ নিয়ে যেতে পারলে কিছুটা নগদ টাকা হাতে আসবে। বেশ কিছুদিন থেকে সযত্নে লালিত বাগানের গাঁদা ফুলগুলোকে পরখ করে ঝুনু। অজস্র হলুদ-গেরুয়া পাপড়িতে ফুলগুলো ভরে উঠেছে। রঙিন ফুলের হাসি ঝুনুর ঠোঁটেও ছড়িয়ে পড়ে। আকাশে সারাদিন মেঘের ছিটেফোঁটাও ছিল না, বেলাশেষের ক্যানভাসে শুধু ধরা দিলো কয়েক টুকরো গোলাপি মেঘের ভেলা। কালকে আর বৃষ্টি-ফিষ্টি হবে না...আশাবাদী ঝুনু চেয়ে থাকে দিগন্তের পানে।
দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, কালীপূজার মতো ততোটা না হলেও ছাব্বিশে জানুয়ারী, পঁচিশে বৈশাখ, পনেরো আগস্টে বাজারে ফুলের চাহিদা ভালোই থাকে। শিবরাত্রিতে যেমন ধুতুরা, কালীপুজোয় রক্তজবা; তেমনই কালকের দিনটিতে গাঁদার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ দিনগুলোর আগের রাতে দু'চোখে কিছুতেই ঘুম আসে না ঝুনুর। প্রতিবারের মতো এবারও সে টর্চ নিয়েই বাগানে ঢুকে পরে। রাতের বেলা গাছ-পালা, পশু-পাখিদের বিরক্ত করা পাপ। অনেক চেষ্টা করেও ছেলেকে এই কথাটা বোঝাতে পারেনি মণিমালা। কিন্তু সেসব যাই হোক আঁধারে ছেলেকে ঘর থেকে কিছুতেই বেরোতে দেয় না সে। দাওয়ায় বসে প্রভাত প্রতীক্ষায় প্রহর গোনে ঝুনু।
ভোরের আলো দু'চোখ ছুঁতেই মায়ের সম্মতি পেয়ে ঝনঝনিয়ে ওঠে ঝুনুর সাইকেল। হাওয়ার বিপরীতে ফিনফিনে শার্ট উড়িয়ে খালি পথ সন্তরণে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে এগোয় সে। দু'টো প্রাইভেট স্কুলে বেশ কিছুটা ফুল বিক্রি হয়ে গেছে। শহরে ঢোকার মুখে ক্লাবের ছেলেরাও তার কাছ থেকে কিছুটা ফুল রাখে। অল্প সময়ে অর্ধেকের বেশি ফুল বিক্রি হয়ে যাওয়ায় অনেকদিন পর মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে তার।
শহরের মাঝামাঝি একটা ক্লাবে কয়েক বছর থেকে ফুলের যোগান দিচ্ছে সে। সেখানে গেলেই বাকিগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। খুব কাছের তিন-চার পরিবারের জন্য নিয়ে আসা পুজোর ফুল-বেলপাতা পৌঁছে দিয়ে সোজা বাড়ির পথ ধরবে। পরিচিত পথে কিছুটা এগোলে ডানপাশের সেই গলিটাতে চোখ আটকে যায়। দত্ত ম্যানসনের সামনে এটা কি দেখা যাচ্ছে! কৌতূহলী ঝুনু আস্তে আস্তে গলির অন্দরে ঢুকে পরে। দু’পাশ থেকে বাঁশ দিয়ে বাড়িটাকে আগলে রাখা হয়েছে। লম্বা গলিটাতে আর একটা মানুষও নেই। দোতলার জানালাতে রঙিন পর্দা ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। মেইন রোড থেকে একটা বাইক গলিতে ঢুকতে দেখে সে ভিরমি খায়। সামনে রাস্তা বন্ধ, তাড়াতাড়ি পালানো সম্ভব নয়। বাইকের সামনে কাগজের পতাকা গেঁথে রাখা হয়েছে। ভয়মিশ্রিত দ্বিধায় মনটা আনচান করছে। বাইকটা ততক্ষণে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। গুন্ডামতোন তিনটা সমবয়সী ছোকরা কটমট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবার বিপদের গন্ধ পায় ঝুনু। একেবারে পিছনের জন বাইক থেকে নেমে বেশ জোরে ধাক্কা দিলে সাইকেল সহ চিৎ হয়ে পড়ে সে। আরেকটু হলেই সোজা ড্রেনে গিয়ে পড়তো। ঝেড়েঝুড়ে উঠে প্রতিরোধ করতে গেলে ঘুষি খেয়ে দেওয়ালে শরীরটা তার আছড়ে পড়ে। বাইক দাঁড় করিয়ে ওকে মোকাবেলা করার জন্য এখন তিনজনই প্রস্তুত। তাদের মধ্যে দুজনের কব্জিতে লাগানো আছে তিরঙ্গা ব্যান্ড। হাত গুটিয়ে মাঝের জন ওর দিকে ধাবিত হলে বাকি দু'জন ওর সাইকেলের দিকে এগোয়। বাধা দিতে গেলে তীব্র ধাক্কায় পড়ে যাওয়ার আগে নড়বড়ে সাইকেলের গোঙানি ঠিক টের পায় ঝুনু।
কারো পরোয়া না করেই সর্বসমক্ষে, মিডিয়ায় একাধিকবার নিজের রাজনৈতিক মতামত জাহির করে সরকার-বিরোধী দু'দলের কাছেই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন ডাঃ অরুণাভ দত্ত। বেশ কয়েকবার ফোনে হুমকি পেলেও নির্ভীক লোকটি কোনোদিনই এসব গায়ে মাখেননি। শাণিত কলমে অপ্রিয় সত্যটুকু জনসমক্ষে বারবার তুলে ধরেছেন। দূর থেকে গালাগাল দিলেও তার ক্ষুরধার যুক্তির কাছে কেউ টিকতে পারেনি। একটা ব্যক্তিগত কাজে শহরের বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার সপ্তাহদিন বাদে যখন তিনি করোনা পজিটিভ ধরা পড়লেন, তখন নিন্দুকেরা তার নামে মিছে অপবাদ ছড়ানোর সুযোগ দু'হাতে লুফে নিলো। তিনি নাকি সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করেছেন, করোনা টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিতে রাজি হননি! তাছাড়াও বিপদ হতে পারে জেনেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার উদাসীন থাকার গুজব হোয়াটসঅ্যাপের হাত ধরে পাড়াসুদ্ধ লোকের কাছে পৌঁছেছে।
রোজ সকালবেলা বেল বাজিয়ে দত্তবাড়িতে প্রবেশ করা বোবা-কালা ছেলেটিকে অনেকেই অনেকবার দেখেছে। গত দশ দিনে যারাই এই বাড়িতে এসেছে বা দত্তবাবুর সাথে দেখা করেছে, তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পজিটিভ কেস পাওয়ার পরের দিনই ছেলেটিকে বাড়ির সামনে দেখতে পেলে তাকে অনেক চেষ্টা করেও আটকানো যায়নি। ছোড়াটা চোখের নিমিষে সাইকেলে চড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। এই ঘটনার জন্য লোকে পরোক্ষে দত্ত পরিবারকেই দায়ী করছিল, তাছাড়া ব্যাপারটা প্রশাসনের কানেও পৌঁছে দিয়েছিল স্থানীয়রা।
জলের ঝাপটা লাগতেই জ্ঞান ফেরে ঝুনুর। দু'জন পুলিশ সহ আপাদমস্তক ঢাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কয়েকটা কৌতুহলী মুখ উঁকি দিচ্ছে। বাইকওয়ালা ছেলেগুলোকে দেখা যাচ্ছে না। অদূরেই দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে সাইকেলখানা। সামনের চাকাটা একদম বেঁকিয়ে গেছে। সারাটা গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে সে। একজন স্বাস্থ্যকর্মী তাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলগুলো লোকজনের পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে গেছে। খোঁড়াতে-খোঁড়াতে গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসে সে। গ্লাসের ওপারে ড্রেনের জলে দু'চোখ আটকে যায়। হড়হড় করে বয়ে যাচ্ছে নোংরা কালো জল। একজোড়া গাঁদা কিছু একটাতে লেগে কোণঘেঁষে আটকে আছে, জলের তোড়ে ভেসে যায়নি। ঝুনু অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ফুলগুলোর দিকে। করোনা সন্দিগ্ধ 'আসামি'কে নিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করলে ফুলদুটো তার চোখে ক্রমশ ছোটো হতে হতে মিলিয়ে যায়। দূরের মাইক থেকে দেশাত্মবোধক গান ভেসে আসে...
"অ্যায় ওতন, ওতন মেরে আবাদ রহে তু,
ম্যাঁয় জহাঁ রহু জহাঁ মে ইয়াদ রহে তু..."

Comments

Popular posts from this blog

তবু আগমনী বাজে..

#সর্বভুক

শারদ সুজন